সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো দারুণ ভাইরাল হয়েছিল রূপম ইসলামের। সেখানেই বাংলার রকস্টারকে চিত্রপরিচালকদের নিয়ে কিছু কথা বলতে শোনা যায়। শুধু তাই নয় তাঁর কথা বলার ভঙ্গিমা নিয়েও কটাক্ষ করা হয় তাঁকে। এবার এই গোটা বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
আরও পড়ুন: শাড়ি থেকে চুমু বিতর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে ট্রোলড, মমতা শঙ্কর বললেন, ‘মেয়ে হিসেবে একটা মান সম্মান…’
কী লিখলেন রূপম ইসলাম?
এদিন সদ্য ভাইরাল হওয়া রিল নিয়ে রূপম ইসলাম লেখেন, 'ক্ষোভ এবং চিত্রপরিচালক প্রসঙ্গে, এবং আরও কিছু কথা। কোথাও শিরোনামে লিখছে ‘ক্ষোভ প্রকাশ’, কোথাও ‘তীব্র আক্রমণ’, কোথাও আবার নতুন উদ্ভট বাংলায় ‘তীব্র প্রকাশ’, যা বস্তুতপক্ষে অর্থহীন। তবে শিরোনামগুলির মধ্যে মিল হল— এ সবই নাকি চিত্রপরিচালকদের ‘বিরুদ্ধে’ বলা। অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী। ঠিক তেমনই আজকের যুগের অল্প ভিডিও বা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ‘রিলস’— কারণ তাতে অর্ধ সত্য প্রকাশিত হয়, বাকি অর্ধেক মানুষের সামনে এসে পৌঁছয় না। বা পৌঁছতে দেওয়া হয় না।'
তিনি এদিন আরও লেখেন, 'আমি যে মঞ্চে গান গাই— তা কারও কৃপাপ্রার্থী হয়ে আমায় অর্জন করতে হয়নি— এ তো অল্টারনেটিভ গান বাজনারই জয়। যেখানে আমি জিতলাম, জিতলেন আমার দর্শক-শ্রোতা, আমার জনপ্রিয়তা অন্য কেউ সার্থকভাবে ব্যবহার করলেন, তা তাঁদের কাজে লাগল— এতে ক্ষোভের কী আছে রে বাবা! এতো আনন্দের বিষয়। সেটাই তো বলেছি! আর এসব কথা আমি জানলাম কী করে? চিত্রপরিচালক, সঙ্গীত পরিচালকরাই তো আমায় এটা বারবার বলেছেন! বানিয়ে তো বলছি না! এটা তো আমার ননফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে নিজের তৈরি করা গান নিয়ে, দামি নায়কের ভিডিয়ো না পেয়েও, বিরাট প্রযোজনা সংস্থার সাহায্য এবং অংশগ্রহণ না পেয়েও, গানগুলিকে, অ্যালবামগুলিকে জনপ্রিয় করা, একটা নতুন ধারাকে সঙ্গীত বাজারে প্রতিষ্ঠিত করবার সাফল্য। এর মধ্যে ক্ষোভ কোথায়, আক্রমণ কোথায়— আমি তো বুঝছি না! কৃপাপ্রার্থী হলে খুশি হতাম, কৃপাপ্রার্থী না হতে হয়ে ক্ষুব্ধ— এ কথা আমি কখন বললাম! বরং গর্বই তো করলাম স্বাধীন বাংলা মৌলিক গানের মঞ্চ নিয়ে!' এই বিষয়ে পরিশেষে তিনি লেখেন, 'ফসিলস-এর কনসার্টগুলি মহোৎসব গোছের। কে কোথায় কখন ছবি তুলছেন সব লক্ষ করা, বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাকেই রক পারফর্মেন্সের খ্যাপামিগুলো, যার একটা দার্শনিক ভিত্তি আছে— (ভিত্তির ব্যাখ্যাগুলি আমি আমার প্রকাশিত বইগুলিতে আগেই লিখেছি— কিন্তু বই পড়া তো ফেসবুক-শিক্ষিতর কর্ম নয়, তাই তো?) সেগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। আরও কিছু জিনিস আমি বন্ধ করে দেব, কারণ সম্মুখের রক জনতা ছাড়াও অনভিজ্ঞ এবং রক-অশিক্ষিত শ্রোতার কাছে খণ্ডচিত্র হয়ে পৌঁছে যাচ্ছি যখন, যুগের নিয়মেই সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন! সতর্ক থেকে আদৌ কি রক পারফর্মেন্স সম্ভব? কিন্তু এছাড়া তো আর কোনও উপায় নেই। কারণ অতিরিক্ত খেটে, অতিরিক্ত অপমানিত হওয়া নির্বোধের কাজ। সাধ করে নির্বোধ হবই বা কেন?'
ভূমি ব্যান্ডের সদস্যকে জবাব রূপমের
এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে রূপমকে কটাক্ষ করেছেন ভূমি ব্যান্ডের এক সদস্য। আর্যেশ রায় নামক সেই ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করেই তিনি এদিন তাঁর উদ্দেশ্যে লেখেন, 'আমাদের মতো রক পারফর্মারদের পারফর্মেন্সে যুগ-যুগ থেকেই উদ্ভট রস, তাণ্ডব রস, খেয়াল রস ছুঁয়ে যাওয়া আছে, যার একটা কনটেক্সট বা প্রসঙ্গ থাকে। সম্পূর্ণ কনসার্ট দেখলে ব্যাপারটা বেশ বোঝা যায়। এসব কথা কনসার্ট কর্মীরা জানেন, বা তাঁদের জানবারই কথা। একটি ছোট্ট অংশকে আলাদা করে দেখলে বোঝা যাওয়ার তো কথা নয় উদ্ভট রস সেখানে কীসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশিত হল। তবুও এই অংশটি আলাদা করে তুলে ধরে অন্য আরেক তরুণ কনসার্ট কর্মী যখন বালখিল্য মন্তব্য করেন, তখন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হয়। মনে হয়, এতদিন কেটে যাওয়ার পরেও রক সংগীতের অন্যতম মূল শিক্ষা— free yourself on the stage from all inhibitions— এঁরা (সম্মানবাচক এবং স্বস্তিদায়ক বহুবচন ব্যবহার করলাম) নিজে জেনে বুঝেও (জানেন না, এতটা মূর্খতা আশা করি না) অস্বীকার করতে চাইছেন, কথ্য বাংলায় ‘পাবলিক নাচানো’ যাকে বলে, সেটা করাই এঁদের আসল উদ্দেশ্য । অবশ্য ‘পাবলিক নাচাতে রাজি নই’, এ কথা বলে ফসিলস বিদেশের কনসার্ট ছেড়ে দিয়েছিল— যে কথা আমার একটি বইতে আমি উল্লেখ করেছি, তেমন আদর্শ সবারই থাকতে হবে, তাও তো না। পাবলিক নাচাতে কেউ কেউ ভালোবাসবেন নির্ঘাত, সে তার মঞ্চ পেছনে ফ্লেকস লাগানো মাচা-ই হোক অথবা ফেসবুক!।'