কাছের মানুষ মনের মানুষ হয়ে ওঠা কি অতটাই সহজ? আর কাছের মানুষের সহমর্মী হয়ে ওঠা? কত যন্ত্রণা বুকে বেঁধে মানুষ শব্দ উজাড় করে তা অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর কলমই বলে উঠল। ‘কখনও ডানায় চোট লাগা পাখি দেখেছ? আমি প্রতিনিয়ত দেখি’ প্রেমিকা ঐন্দ্রিলার জন্য সব্যসাচীর এই ভালবাসা ব্যক্ত দেখে মনখারাপ নেটিজেনের। কেমন আছেন ক্যানসার আক্রান্ত প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা? অনুরাগীদের জানালেন সব্যসাচী।
২০১৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। সেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে ক্যানসারকে হার মানিয়েছিলেন তিনি। যদিও লড়াই যে তাঁর বাকি ছিল। পাঁচ বছর পর ফের ক্যানসার আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা শর্মা, মানে জিয়নকাঠির জাহ্নবী। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে শরীরে ফের থাবা বসায় কর্কট রোগ।
তবে মন থেকে যথেষ্ট শক্ত ঐন্দ্রিলা। দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। পর পর কেমোথেরাপি, সেই কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মারণ রোগ থাবা বসায় অভিনেত্রীর শরীরে। ১৬টি কেমো আর ৩৩টি রেডিয়েশনের পর গতবার ক্যানসার যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। এবারও লড়াই ছাড়তে নারাজ তিনি। তেমনি বান্ধবী ঐন্দ্রিলাকে এত সহজে হারতে দেবেন না বলে সাফ জবাব অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর। বিগত কয়েকমাস ধরে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে এই লড়াইয়ে সামিল সব্যসাচীও।
বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সব্যসাচী লিখেছেন,'আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম সার্জারিটাই আসল, সেটা সামলে উঠলে বাকি ট্রিটমেন্টটুকু খুব একটা সমস্যার হবে না। তবে বিষয়টা একেবারেই উলটে গেছে। সার্জারির পরে যে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে সেটা অনেকটাই বেশি কষ্টের। কিছু কিছু দিন বড়ই কষ্ট পায়, মাঝেমধ্যেই ব্লাড প্রেসার অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায়, বিছানা থেকে মাথাই তুলতে পারে না। রক্তের মধ্যেও বিস্তর গোলযোগ দেখা যায় তখন। ব্রহ্মতালু থেকে শুরু করে পায়ের পাতা অবধি মারাত্মক যন্ত্রণা থাকে, বিস্তর ব্যাথার ওষুধেও যা কমতে চায় না। হাত পা টিপে দিলে বা গরম সেঁক দিলে সাময়িক আরাম পায় ঠিকই কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। হাই ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কোনও মতে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। যে কটা দিন ভালো থাকে, সেই দিনগুলো শুয়ে শুয়ে সিনেমা দেখে আর মোমো খায়।'
এখানেই শেষ করেননি তিনি। আরো লেখেন, ‘আসলে অসুখটা এতটাই দীর্ঘায়িত যে শুরুতে যে মানুষগুলি উৎকণ্ঠিত থাকেন তারাও আস্তে আস্তে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। আর জগতের নিয়ম অনুযায়ী সেটাই খুব স্বাভাবিক বিষয়, সেটা ও নিজেও বোঝে। শরীরটা খারাপ থাকলে মাঝেমধ্যে শিশুর মতন আচরণ করে। মাঝেমাঝে ঘুমানোর আগে, বই পড়ে ভূতের গল্প শোনাতে হয়। একদিন ওকে ফিনিক্সের গল্প পড়ে শোনালাম, আমি জানি ছয় বছর আগে যেমন ফিরে এসেছিলো, ঠিক সেইভাবেই আবার ফিরবে। সেই জন্যই তো আমরা দিন গুনি’।
এবারও লড়াই ছাড়তে নারাজ ঐন্দ্রিলা। পাশে রয়েছে পরিবার, অসংখ্য অনুরাগী, সহকর্মী এবং প্রিয় বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী। তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে আগেই জানিয়েছেন। সব্যসাচীর কথায়, তিনি বিশ্বাস করেন ফিনিক্স যেমন বার বার ছাই থেকে জন্ম নেয় সেরকমই আবার ফ্লোরে ফিরে আসবেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ঐন্দ্রিলাও জানিয়েছেন সব্যসাচী পাশে আছেন বলেই এখনও ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন তিনি।
আপাতত লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের থেকে দূরে অভিনেত্রী। বিশ্রামে রয়েছেন। দিনের পর দিন শারীরিক কারনে ফিরতে পারছেন না ফ্লোরে। কর্কট রোগের সঙ্গে লড়াই অব্যাহত তাঁর।