সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এমের সঙ্গে সব্যসাচীর কোলাবোরেশন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছিল সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। ভারতের প্রথম সারির এক ফ্য়াশন ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক হাই স্ট্রিট ব্র্যান্ডের সমন্বয়। যা রীতিমতো হইচই ফেলেছে ফ্য়াশন ইন্ডাস্ট্রিতে। কোলাবোরেশন ফলে সব্য়সাচীর ব্র্যান্ড গিয়ামবটিস্তা ভ্যালি, জিমি চু, লেগারফেল্ড এবং ভার্সেসের মতো একই লিগে পরিণত করে।
‘Big Love’ ক্যাপশনে মুক্তি পেল সব্যসাচী এবং এইচঅ্যান্ডএমের সমন্বয়ের প্রথম কালেকশন – ‘Wanderlust’। ইতিমধ্যেই তাঁরা বিশ্বব্যাপী সমন্বয়ের কথা জানিয়েছে। ট্রাউজার, টি-শার্ট, বোহেমিয়ান কাফতান, ভারতীয়দের জন্য শাড়ির কালেকশ রয়েছে এখানে। ভারতীয় কারুশিল্পের ঐতিহ্যের পাশাপাশি রাজস্থানের সাঙ্গানেরি প্রিন্টের অনুপ্রেরণা তৈরি করা হচ্ছে এই কালেকশন। ৭০ ধরণের পোশাক নিয়ে লঞ্চ করেছে Wanderlust।
১২ অগস্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে এই কালেকশন। লঞ্চ করতেই মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় পোশাক। দেশের তৈরি কাপড়কে বিশ্বের বাজারে তুলে ধরবে এই সমন্বয় ব্র্যান্ড। নির্দিষ্ট কিছু এইচঅ্যান্ডএম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর এবং ৪৮ টি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে তাঁদের তৈরি পোশাক। অনেকেই এটাকে বিশ্বব্যাপী ভারতীয়দের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখছে। আবার ভারতীয় কারিগর সম্প্রদায় অবশ্য সব্যসাচীর এই কোলাবোরেশনকে নীতির বিরোধী হিসেবে দেখেছে।
এবিষয় সব্যসাচীকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে ডিজাইনার, টেক্সটাইল রিভাইভালিস্ট লায়লা তৈয়াবজি, দ্য ক্র্যাফটস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, আর্টিসনাল কালেক্টিভ দস্তকরি হাট সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জয়া জেটলি এবং ক্যালিকো প্রিন্টারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, সাঙ্গানেয়ার সহ অন্যান্যরা। খোলা চিঠিতে কোলাবোরেশনের বিষয় নিজেদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। প্রশ্ন তোলা হয়েছে কারিগরদের ভবিষ্যৎ নিয়েও।
খোলা চিঠিতে নিজেদের বক্তব্য হিসেবে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘ওয়ান্ডারলাস্ট’ কালেকশনের অংশ হতে না পেরে তাঁরা গভীরভাবে দুঃখিত। কারিগরদের জন্যও এটি একটি ক্ষতিকর। এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যেন এই কালেকশনে ভারতীয় ছোয়া রয়েছে। বাস্তবে এই কালেকশনের মধ্যে কোনো ভারতীয় কারিগরের হাত নেই। বিশ্বের দরবারে ভারতীয় ডিজাইনকে যথোপযুক্ত সম্মান দেওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ ছিল, যা অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ভারতকে প্রচুর লাভবান করত। অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন মার্কেটে সব্যসাচীর এই কোলাবোরেশনে বিক্রি পোশাক ‘সোল্ড আউট’ হওয়ায় বেশ গর্ব বোধ করছেন। ভেবে দেখুন, এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে যদি ‘হ্যান্ডমেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা থাকতো তাহলে তা লক্ষ লক্ষ চাকরি, ইক্যুইটি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারতো। এমনকি যদি পুরো সামগ্রীর অর্ধেকও ভারতীয় কারিগরদের দ্বারা নির্মিত হতো, তবে এই মহামারীর সময়ে সেটিই বেশ প্রভাব ফেলতে পারতো…।
সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে খোলা চিঠির পালটা একটি বিবৃতি জারি করেন। চিঠির জবাব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে এইচ অ্যান্ড এম এর কোলাবোরেশনের সংগ্রহ তাঁর ‘সাধারণ কালেকশন’এক থেকে আলাদা। এই ফ্যাশন ব্রান্ডের কর্ণধারের কথায়, ‘… H&M ছিল একটি ভিন্ন লক্ষ্যের অংশ, ভারতীয় নকশা আন্তর্জাতিক দরবাতে তুলে ধরার লক্ষ্য। যদিও এটি নিঃসন্দেহে আমার এবং আমার ব্র্যান্ডের জন্য একটি বড় জয়, আমি এটাও জানি, এটি ভারতেরও একটি বড় জয়… ’।

আর্টিসনাল কালেক্টিভ দস্তকরি হাট সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জয়া জেটলি বলেন, পুরো বিষয়টা সব্যসাচীর ব্র্যান্ডকে বেশি হাইলাইট করছে। তাঁরা সকলে, কারিগর এবং কারিগর সম্প্রদায়, শিল্পের রূপ এবং জীবিকার কথা ভাবেন। কিন্তু সব্যসাচী যেটা করছে সেটা ‘ডিজিটাইজেশন’। জেটলির কথায়, ভারতীয় কারিগরেরা অত্যন্ত দক্ষ এবং যা চাইবে তাই তৈরি করতে পারবে। তাই জন্য বিশাল ব্যাপ্তির উপস্থাপনা করতে হবে বলে মনে হয় না। কারুশিল্পে কাজ করার ইচ্ছে যারাই প্রকাশ করে তাদের সবাইকেই আমরা বলি, ‘সরাসরি কারিগরের কাছে যাও, তাদের দক্ষতা বোঝ’। কিন্তু যদি আপনি তাদের কাজকে ‘হাইব্রিড’ বলে চালিয়ে দেন তাতে তাঁদের নিজস্বতা থাকে না। এটা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।