দেশের যে যে প্রেক্ষাগৃহে ‘পাঠান’ মুক্তি পাবে, সেই সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে অন্য কোনও ছবি চলবে না। মুম্বইয়ে বসে এই শর্তই রেখেছন ‘পাঠান’ নির্মাতারা। ২৫ জানুয়ারি বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘পাঠান’। সকাল সাড়ে ৬টায় হলমুখী দর্শক। ইতিমধ্যে অনেকেই এই ছবি দেখে ফেলেছেন।
শুরু থেকেই একাধিক বিতর্কের মুখে পড়েছে ‘পাঠান’। এরই মধ্যে হলে ছবি মুক্তির প্রসঙ্গে চাউর হয়েছে নতুন বিতর্ক। ‘পাঠান’ মুক্তির আগে সদ্য মুক্তি পাওয়া একাধিক বাংলা ছবি প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সবর হয়েছে টলিউড। এক ফেসবুক লাইভে বাংলায় বলিউডের ছবি চলার নিয়ম নিয়ে সরব হয়েছেন অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য। মুখ খুলেছেন বলিউডের দাদাগিরির বিরুদ্ধে।
সাহেব ফেসবুক লাইভের ভিডিয়োতে জানান, মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে তাঁর একটি ছবি 'আরও এক পৃথিবী'র প্রেস কনফারেন্স ছিল। সেখানে এই সিনেমা নিয়ে কথা বলার সময় ঝড় তোলেন পরিচালর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। অভিনেতার কথায়, 'কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ছবি 'কাবেরী অন্তর্ধান' মুক্তি পেয়েছে এবং তা ভালো ব্যবসা করছে। গতকাল লেক মলে দুটি শো হাউজফুলও গিয়েছে'।
এ প্রসঙ্গে সাহেবের মন্তব্য, ‘সমস্যাটা এখানে নয়, সমস্যাটা হল মুক্তি পেতে চলেছে একটা বড় বাণিজ্যিক ছবি, শাহরুখ খানের ছবি পাঠান। পাঠান মুক্তি পাচ্ছে তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই, এত বছর পর শাহরুখ খানের একটা বড় ছবি আসছে, সেটা নিয়ে আশা রয়েছে ভক্তদের, আপনারা দেখবেন আমিও দেখব। সেটা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই'।
আরও বলেন, 'কিন্তু এই সিনেমার প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটাররা জানিয়েছেন যে তারা সেই সিনেমা হলেই পাঠান চালাবেন যেখানে শুধুমাত্র পাঠান চলবে। অর্থাৎ গতকাল কৌশিকদার দু-খানা শো হাউজফুল যাওয়া সত্ত্বেও কৌশিকদাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বুধবার তাঁর সিনেমার শুধু একটাই শো থাকবে তাও দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে এবং একশোটার কম সিট রয়েছে সেই সিনেমা হলে। কেন? তাদের যুক্তি অনুসারে যে সিনেমা হলে পাঠান চলবে সেখানে অন্য কোনও হিন্দি বা বাংলা সিনেমা চলবে না। এটা আমার কাছে একটা বীভৎস তীব্র প্রতিবাদের জায়গা তৈরি করেছে’।
সাহেবের মন্তব্য, 'সাত হাজার হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘পাঠান’। আর মাত্র ৩০টা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বাংলা ছবি। 'কাবেরী অন্তর্ধান', প্রজাপতি-র ছবি হাউজফুল হচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাকে মাত্র ৫টা প্রেক্ষাগৃহ দেওয়া হলে প্রযোজকেরা লাভ করবেন কোথা থেকে! একটা ভালো বাংলা ছবি তৈরি করে, ব্যবসা করে পরে আবার একটা ভালো বাংলা ছবি বানাবেন, তবেই তো ইন্ডাস্ট্রি বাড়বে'।
আরও বলেছেন, ‘চাকরি চুরি, টাকা চুরি.. সবই আমরা মেনে নিচ্ছি। বান্দ্রার অফিস থেকে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বাংলায় কী ছবি চালানো হবে। তাঁরা নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলায় বাংলা ছবি চলতে পারে না। কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রতে এটা করতে পারবেন? প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ রয়েছে যে বাংলায় বাংলা ছবি নিয়ে কোনও পলিসি তৈরি হচ্ছে না। বাংলা ছবির যাত্রা শুরু করতে বেশ কিছু সময় লাগে। প্রথম দিনই মালা পরিয়ে দুধ ঢেলে শুরু হয় না বাংলা ছবি। প্রাইম টাইমে একটা বাংলা ছবিরও শো দেওয়া হচ্ছে না। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি’। অভিনেতা এর জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন।
সাহেব ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর পাঠান বা শাহরুখকে নিয়ে কোনও আপত্তি নেই কিন্তু যেভাবে বাংলা সিনেমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিনেতা তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভ করে 'পাঠান'-এর জন্য বাংলা ছবি সরিয়ে নেওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘পাঠান আমরা সবাই দেখব। যাঁদের এই ছবির জন্য ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে তাঁরাও পাঠান দেখবে। একজন সিনেমাকর্মী হিসেবে আমিও চাই শাহরুখ খানের এই ছবিটি সাফল্য পাক। কিন্তু তার জন্য বাংলা ছবি নামিয়ে নেওয়া আমার খারাপ লাগার জায়গা'।