সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার খবর সামনে আসবার পর থেকেই বলিউডের তরফে একের পর এক চাঞ্চল্যকর প্রতিক্রিয়া বেরিয়ে আসছে। নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথায় প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন বলিউড পরিবারের অনেক সদস্যই। সেই তালিকাতেই এবার যোগ হল সলমন খানের দাবাং পরিচালক অভিনব কশ্যপের নাম। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে সলমন খান ও তাঁর গোটা পরিবারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এই পরিচালক। তাঁর অভিযোগ, সলমন খান ও তাঁর পরিবারের ষড়যন্ত্রের জন্যই নাকি তিনি একের পর এক ছবির কাজ হারান,মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং পরিণতি ডিভোর্স।
অভিনব কশ্যপ লেখেন, সরকারের কাছে আমি আবেদন জানাতে চাই সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পূর্ণ তদন্ত হোক…কিন্তু ওঁর লড়াইটা জারি থাকবে,সুশান্তের এই আত্মহত্যা সামনে এনে দিল বলিউডের একটা অনেক বড় সমস্যাকে যার সঙ্গে আমরা অনেকেই লড়াই করে চলেছি। ঠিক কোন কারণ একটা মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করতে পারে? আমার মনে হয় সুশান্তের মৃত্যু একটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র, ঠিক যেমনটা মিটু আন্দোলন-বলিউডের ভিতরে অনেক বড় অসুস্থতা লুকিয়ে রয়েছে'।
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে দাবাং ছবির পরিচালক জানান, ১০ বছর ধরে আমাকে শোষণ করছে, বুলি করছে আরবাজ খান।দবাং সুপারহিট হওয়ার পরেও দাবাং টু'র পরিচালকের আসনে ছিলেন না অভিনব। ছবির ঘোষণার পর তিনি সেই প্রোজেক্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
এই ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগে দাবাং টু থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম কারণ আরবাজ খান, সোহেল খান ও তাঁর পরিবারের যোগ সাজশ। তাঁরা আমার কেরিয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিল, আমি বারবার বুলিং এর শিকার হয়েছি। আরবাজ খান শ্রী অষ্টবিনায়ক ফিল্মসের সঙ্গে আমার দ্বিতীয় প্রজেক্ট হতে দেয়নি। আমি সই করার পর আরবাজ খান ব্যক্তিগতভাবে সেখানকার প্রধান রাজ মেহতাকে ফোন করেন এবং ভয় দেখান আমাকে নিয়ে কাজ করলে ফল ভুগতে হবে। ফলে আমাকে সাইনিং অ্যামাউন্ট ফেরত দিতে হয়েছিল,এরপর আমি ভায়াকম পিকচারসে যাই। সেখানেও একই ঘটনা ঘটে। তবে এইবার ষড়যন্ত্রকারী ছিল সোহল খান। সোহেল খান সেইসময় ভায়াকমের সিইও বিক্রম মালহোত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। আমার প্রজেক্ট মাঝ পথে আটকে যায় এবং সই করার রাশি সাত কোটি টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতে হয়। সুদের পরিমাণ ছিল ৯০ লক্ষ টাকা। তখন আমায় বাঁচাতে এসেছিল রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট এবং আমি ওদের সঙ্গে বেশরম নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপরেও ওরা চুপ ছিল না। সলমন খান ও তাঁর পরিবার আমার ছবির মুক্তি আটাকানোর চেষ্টা করে, বেশরমের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে পিআর স্যাট্রেজি তৈরি করে।
ছবির ড্রিস্ট্রিবিউটারদের ভয় দেখায় যাতে ওরা ছবি না কেনে। যদিও রিলায়েন্স এন্টারটেনমেন্ট এবং আমি সাহস দেখিয়ে ছিলাম..ছবিটা মুক্তি পায় আমাদের চেষ্টায় কিন্তু এত ট্রোল এবং খারাপ প্রচার প্রভাব ফেলেছিল ছবির বক্স অফিসে, এরপর ছবির স্যাটেলাইট রাইট যা আগেই ৫৮ কোটিকে জি টেলিফিল্মসের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল তার বিরুদ্ধে যোগ সাজশ করা হয়। …এরপর অনেক চেষ্টায় কম টাকায় ওই ছবি ছাড়তে হয়েছিল'।
এইভাবেই বছর বছর ধরে আমার সমস্ত প্রজেক্ট ও ক্রিয়েটিভ কাজের ক্ষতি করতে শুরু করে এবং আমাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়,বাড়ির মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি আসতে থাকে। নিজের উপর আস্থা হারাতে থাকি ও রাগ হতে থাকে। আর সে কারণেই ২০১৭ সালে পরিবারের থেকে দূরে যেতে থাকি, যা শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদ ও পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়'।
আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে পাঠানো কিছু হুমকি বার্তা নিয়ে আমি পুলিশের দারস্থ হই ২০১৭ সালে,কিন্তু তাঁরা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে।অনেক সাধাসাধির পর অজ্ঞাতর বিরুদ্ধে কেস দায়ের হয়। হুমকি জারি ছিল..আমি এরপর সেই ফোন নম্বর গুলো ট্রেস করবার আবেদন জানাই, আমার সন্দেহ ছিল সোহেল খানের উপর কিন্তু আজ পর্যন্ত ওরা নম্বর ট্রেস করতে পারেনি'।
অভিনব সিনহা কাশ্যপ তাঁর পোস্টে লেখেন, তিনি হাল ছাড়বেন না। তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। গত ১০ বছর ধরে লড়ছেন আগামিতেও লড়াই জারি থাকবে। তিনি সরাসরি লেখেন, 'আমি জানি আমার শক্রু কারা, তোমরা জেনে রাখো তারা হল সেলিম খান, সলমন খান, আরবাজ খান এবং সোহেল খান'।
পোস্টে ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর বিরূদ্ধেও সরব হয়েছে পরিচালক।পোস্টের একেবারে শেষে পরিচালক লেখেন, 'এটা সলমন খানের পরিবারের সঙ্গে আমার নিজের স্ট্রাগলের গল্প এবং আমি একাই যথেষ্ট.. হ্যাঁ আমি কোনদিন আত্মহত্যা করব না কিন্তু যদি আমার সঙ্গে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়, এটাকে যেন আমার পুলিশ স্টেটমেন্ট হিসাবে ধরা হয়'।