সলমন খানের বাড়ির বাইরে গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে জলঘোলা কিছুতেই থামছে না। এই মামলায় অভিযুক্ত অনুজ থাপনের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর পর থেকে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অনুজের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থাকায় মুম্বই পুলিশের উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ বম্বে হাইকোর্ট।
মুম্বই পুলিশের হেফাজতেই আত্মহত্যা করে অনুজ। এই ঘটনায় অনুজের পরিবার আঙুল তুলেছে মুম্বই পুলিশের দিকে। সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে থাপনের মা রীতা দেবী গত ৩রা মে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই আবেদনের শুনানিতেই সিআইডি-র তদন্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করল আদালত।
গত শুনানির সময় বেঞ্চ তদন্তভার অবিলম্বে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরের আবেদন না করে পুলিশের তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়েছিল। এই মর্মে তদন্তের সম্পর্কে বুধবার বম্বে হাইকোর্টে একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিয়েছে মুম্বই পুলিশ। বিচারপতি এ আর বোরাকর এবং সোমশেখর সুদর্শনের এজলাসে চলছে এই মামলা। আদালতের পর্যবেক্ষণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উল্লেখ নেই। সেখানে বলা হয়ছে, শ্বাসরোধের কারণে মৃত্যু হয়েছে অনুজের। কিন্তু মৃতের গলায় যে ফাঁসের দাগের নির্দিষ্ট ডায়াগ্রাম কিংবা শরীরে আর কোনও চোট-আঘাতের চিহ্ন ছিল কিনা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি পোস্টমর্টেম রিপোর্টে।
বিচারপতিরা স্পষ্ট বলেন, শ্বাসরোধ করে মৃত্যু তো একমাত্র আত্মহত্যা করলেই হয় না, কেউ গলা টিপে ধরলেও তো একই কারণে মৃত্যু হয়।
বুধবার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি জে পি ইয়াগনিক এই মামলায় নথিভুক্ত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের সামনে পেশ করেন। তবে, ইয়াগনিক সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে আবেদনকারীর সাথে (অনুজের পরিবার) প্রতিবেদনটি ভাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে আদালত সরকারি কৌসুঁলিকে নির্দেশ দেন, আবেদনকারী যেন এই রিপোর্ট স্বচক্ষে পরিদর্শন করতে পারে।
এখনও পর্যন্ত এই মামলায় কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি, রাজ্য আশ্বাস দিয়েছে যে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত অপরাধ সংঘটনের দিকে ইঙ্গিত করলে এফআইআর দায়ের করা হবে।
গত ১ মে মুম্বইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চের লকআপের শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় অনুজ থাপনের মরদেহ। পুলিশ আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করলেও থাপানের মা অভিযোগ করেছেন যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইকে হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে গত ৩ মে পিটিশন দাখিল করেন রীতা দেবী। আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে থাপনকে হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নির্যাতন করেছিল।
আগের শুনানিতে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি প্রাজক্তা শিন্ডে আদালতকে জানিয়েছিলেন, আইন অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। একটি এডিআর দায়ের করা হয়েছিল, এবং তদন্তটি ৩ মে সিআইডি-তে স্থানান্তরিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও রীতা দেবীর আইনজীবীরা থাপনের মৃত্যুর পর ১৪ দিন কেটে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। তবে সিআইডি-র উপর এখনও আস্থা রাখল আদালত। আগামী জুনে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় সলমন খানের বাড়ির বাইরে দুই মোটরসাইকেল আরোহী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। পরে বিষ্ণোই গ্যাং-এর দুই সদস্য ভিকি গুপ্তা ও সাগর পালকে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলার সাথে যুক্ত আরও এক ব্যক্তির সাথে ২৬ এপ্রিল পাঞ্জাব থেকে থাপনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।