ঘোষণা হয়েছিল আগেই। সেইমতো দিন যত গড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে আগ্রহও বেড়েছিল। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫ জুন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল 'রে'। সত্যজিতের চারটি জনপ্রিয় ছোটগল্প নিয়েই নেটফ্লিক্সের এই অ্যান্থলজি সিরিজ। গল্পগুলি বিপিনবাবুর স্মৃতিভ্রম, বহুরূপী, স্পটলাইট এবং বারীন ভৌমিকের ব্যারাম। এই চার গল্পের ওপরেই ভিত্তি করে যথাক্রমে তৈরি হয়েছে এই 'রে' সিরিজের ' ফরগেট মি নট',' বহুরূপীয়া', 'স্পটলাইট' এবং 'হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ বরপা’।
একে সত্যজিৎ তার ওপর আবার নেটফ্লিক্স। দুইয়ে মিলে এইমুহূর্তে 'রে' নিয়ে সরগরম ওয়েব দুনিয়া। নেটিজেনদের একাংশ উছ্বসিত তো অন্য অংশ কুঁচকেছে ভুরু। তবে সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের এই বিষয়ে মত কী ? ভুলে চলবে না আটের দশকে ছোটপর্দার জন্য 'সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস' নামের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিলেন তিনি। সত্যজিতের বেশ কিছু জনপ্রিয় গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছিল একেকটি এপিসোড। এরপর ২০০৩ সালে ছোটপর্দার জন্যেই ' সত্যজিতের প্রিয় গল্প' নামের ফের একটি এমন সিরিজ পরিচালনা করেছিলেন সন্দীপবাবু। বলাই বাহুল্য, সেবারেও সত্যজিতের লেখা নানান ছোটগল্পকেই পর্দায় তুলে এনেছিলেন তিনি।
'রে' প্রসঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমসকে সন্দীপবাবু জানালেন, সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকীতে নেটফ্লিক্সের তরফে যেভাবে এই 'ট্রিবিউট' জানানো হলো, তাতে তিনি খুশি। তবে এখনও তাঁর দেখা হয়ে ওঠেনি 'রে'। তবে যদি দেখেও ফেলতেন তবুও এই সিরিজে পরিচালকদের কাজ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতেন না তিনি। যুক্তি হিসেবে সন্দীপ রায় বললেন, পেশায় তিনিও যেহেতু একজন পরিচালক এবং যেহেতু তাঁর বাবার লেখা গল্পের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এই ছবি, তাই তিনি চান না তাঁর কোনও মন্তব্যে বিরূপ বোধ করুক 'রে'-র পরিচালকরা। তবে আগ্রহ নিয়ে যে নেটফ্লিক্সের এই অ্যান্থলজি সিরিজ দেখতে বসবেন সেকথা দৃঢ় স্বরে জানালেন তিনি।
তবে 'রে' না দেখে উঠতে পারলেও সত্যজিতের লেখা এই ছোটগল্পগুলি নিয়ে বেশ কিছু তথ্য শেয়ার করলেন সন্দীপবাবু। তাঁর কথায়, 'দেখুন, বাবার লেখা সব গল্পই ভীষণ প্রিয়। তাই ওঁর লেখার গল্পের র্যাঙ্কিং করা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এটুকু বলতে পারি এই চারটি গল্পের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে আমার সবথেকে প্রিয় বারীন ভৌমিকের ব্যারাম। যেদিন বাবার লেখা এই গল্প প্রথম পড়েছিলাম সেদিন থেকেই আমার অন্যতম প্রিয় হয়ে রয়েছে এই গল্প। অন্যদিকে, বিপিনবাবুর স্মৃতিভ্রম এবং বহুরূপী গল্পের যা ধরণ তা নিয়ে চমৎকার ছবি তৈরি সম্ভব। অসম্ভব সিনেম্যাটিক।'সামান্য থেমে নিজের বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর সংযোজন,' ভাষার কারণে গল্পগুলোর নাম পাল্টেছে। তা নিয়ে আমার আপত্তি নেই। ছবিটা কেমন তৈরি হয়েছে সেটাই আসল।'
ওদিকে 'ফেলুদা' ওরফে সব্যসাচী চক্রবর্তী যে একজন বিরাট সত্যজিৎ ভক্ত তা সর্বজনবিদিত। ফোনের ওপর থেকে প্রথমে একটু দোনোমোনোভাবে জানালেন যে তিনি নিজে যেহেতু এই সিরিজে অভিনয় করেননি তাই সে ব্যাপারে মন্তব্য করাটা তাঁর পক্ষে সমীচীন হবে না। পাশাপাশি এখনও যেহেতু তিনি নেটফ্লিক্সের এই অ্যান্থলজি দেখে উঠতে পারেননি তাই অভিনেতারা এই ছবির গল্পের প্রতি 'জাস্টিস' করতে পারলেন কি না সে ব্যাপারেও তিনি কিছু বলতে অপারগ। তবে অবশ্যই 'রে' তিনি দেখবেন। আজকেই দেখবেন। তার ওপর বাঙালি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও যেহেতু 'রে'-এর দুটি ছবির নির্দেশক সুতরাং কোনওভাবেই যে 'রে' তিনি মিস করবেন না তা খোলা গলায় জানালেন সব্যসাচী। এখানেই না থেমে আরও জানালেন যে সত্যজিতের লেখনী নিয়ে তো কোনও তর্ক হয় না তাই ছবির গল্প নির্বাচন যে এককথায় দারুণ সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁর। তাই বেশি সংখ্যক দর্শক এই সিরিজ দেখবেন বলেই তাঁর আশা।
উল্লেখ্য, সব্যসাচী নিজেও ছোটপর্দায় সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ' সত্যজিতের প্রিয় গল্প'-সিরিজের তিনটি গল্পে কাজ করেছিলেন। তালিকায় রয়েছে,'ভক্ত', 'মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি' এবং 'ময়ূরকন্ঠী জেলি'। তাই ভবিষ্যতে যদি তাঁর কাছে ফের সত্যজিতের লেখা ছোটগল্পের ওপর ভিত্তি করে কোনও ছবি কিংবা ওয়েব সিরিজে কাজ করার প্রস্তাব আসে, তিনি সে ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী হবেন।