এখনও স্কুলের গণ্ডি পার করেননি, ইতিমধ্যেই তাঁর খ্য়াতি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। বাঁকুড়ার ভাদুলের মেয়ে আরাত্রিকা মাইতির কন্ঠের জাদুতে বুঁদ শুধু সারেগামাপা-র বিচারকরা নন, বাংলার আম জনতাও। বিধানসভা ভোটের পর ২৪-এর লোকসভা ভোটেও বামশূন্য, তবুও নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা 'খুদে কমরেড' আরাত্রিকা সিনহা এবার গণসঙ্গীতের পসার সাজিয়ে হাজির সারেগামাপা-র মঞ্চে। আরও পড়ুন-‘খুদে কমরেড’ আরাত্রিকা ফের চমকে দিল সারেগামাপায়, গ্র্যান্ড প্রিমিয়ারে সঙ্গী জোজো
আরাত্রিকার একের পর এক পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে আমাদের। চলতি সপ্তাহে আরাত্রিকার কন্ঠে শোনা যাবে দেশপ্রেমের উদ্দীপনা জাগায় এমন এক গান। এবার ‘মুক্তিরও মন্দিরও সোপানও তলে, কত প্রাণ হল বলিদান’ গেয়ে শোনাবেন আরাত্রিকা। গানটি রচনা করেছিলেন মোহিনী চৌধুরী। সুর করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। সেই গানের সঙ্গে মিলে মিশে গেল রবি ঠাকুর।
আরাত্রিকার সঙ্গে এইবার মঞ্চে লাইভ পারফর্ম করবেন বিশিষ্ট অভিনেতা, নাট্য ব্যক্তিত্ব গৌতম হালদার। মঞ্চে তাঁকে বলতে শোনা গেল, রবীন্দ্রনাথের আগমন কবিতার সেই লাইন- ‘ঝড়ের সাথে হঠাৎ এল দুঃখ রাতের রাজা…’।
এই পারফর্ম্যান্স দেখে মুগ্ধ কৌশিকি-ইন্দ্রদীপরা। উঠে দাঁড়িয়ে দুজনকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন তাঁরা। ওদিকে সঞ্চালক আবির তক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ। ধরা গলায় তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘এটাই সঙ্গীতের সেরা মঞ্চ, এটা সারেগামাপা’।
আরাত্রিকা দাদুর স্বপ্নপূরণে হাজির হয়েছে সারেগামাপা-র মঞ্চে। এতদিন বাম দলের নানান অনুষ্ঠানে, পথসভায়, সভামঞ্চে গান গেয়েছে সে। ছোট থেকে রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছে আরাত্রিকা। তাঁর গানে মুগ্ধ নেটপাড়া। এবার সেই গানে নতুনমাত্রা যোগ করলেন গৌতম হালদারের মতো দুঁদে অভিনেতা। এমন নেভার সিন বিফোর পারফরম্যান্স দেখে খুশি সকলেই।
জাভেদ আলি এবং জোজোর টিমের অন্যতম সেনৈক আরাত্রিকা। শোষিত-বঞ্চিতদের কথা গানে গানে তুলে ধরে বিচারকমণ্ডলী থেকে দর্শক সবার মন এক লহমায় জিতে নিয়েছে সে। গ্র্য়ান্ড অডিশন এবং মেগা অডিশনে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এবং ‘পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা…’র মতো জনপ্রিয় গণসঙ্গীত গেয়ে হইচই ফেলেছিল আরাত্রিকা। এরপর গ্র্যান্ড ওপেনিং-এ জোজোর সঙ্গে ‘ওই উজ্জ্বল দিন’ গাইতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
জীবনের গান গাওয়া আরাত্রিকা সিজনে শুরু থেকেই রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। তিন বছর বয়স থেকে স্টেজ পারফরম্যান্স করছে সে। গত ৬ বছর ধরে কলকাতার শ্রুতিনন্দনে গানের তালিম নিয়েছে আরাত্রিকা। ছোট থেকেই বাবা-দাদুকে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখেছেন। বাম ও গণনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আরাত্রিকার বাবা, সৌম্য সিনহা। গণসঙ্গীতের উপর তাঁর আকর্ষণ বরাবরের, তার হাত ধরেই এবার এত বড় মঞ্চে পৌঁছেছে ভাদুলের মেয়ে। তাঁর গানে মুগ্ধ বৃন্দা করাতও।
আরাত্রিকার গানে যেমন মুগ্ধ সকলে, তেমনই তাঁর সঙ্গে ‘কমরেড’ তকমা জুড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিতও তাঁরা। যদিও গণসঙ্গীতের প্রতি আরাত্রিকার টান নিজের থেকেই। অতীতে তাঁর বাবা-দাদু বলেছেন জোর করে কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হয়নি আরাত্রিকার উপর। পুরোনো বাংলা ছবির গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেও ভালোবাসে আরাত্রিকা। সারেগামাপা-র মঞ্চে আরাত্রিকার কন্ঠে অন্য জঁর গান শুনতেও আগ্রহী সকলে।