মেয়েদের কি নিজের মতো করে বাঁচবার অধিকার নেই? খোলা চোখে স্বপ্ন দেখা কি অপরাধ? কেন আজও আমরা সেকেলে ভাবনা আঁকড়ে বেঁচে রয়েছি এই স্বাধীন ভারতে? সারেগামাপা-র মঞ্চে চাঁচাছোলা ভাষায় এমনই প্রশ্ন তুললেন সুরকার বিশাল দাদলানি।
ভারতের যে রাজ্যে ছেলেদের অনুপাতে মেয়ের সংখ্যা সবচেয়ে কম সেই হরিয়ানার মেয়ে বসুন্ধরা। মেওয়াত জেলার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে সারেগামাপা-র মেগা অডিশনে হাজির হয়েছিল বসুন্ধরা। তাঁর জীবনযুদ্ধের গল্প শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে গোটা মঞ্চ। সারেগামাপা-র মঞ্চে পৌঁছাতে কম কটূক্তি, কম গঞ্জনা সহ্য করতে হয়নি তাঁকে, জানায় কোনওদিনও গানের তালিম না নেওয়া বসুন্ধরা। তাঁর কথায়, সাফাইকর্মীর মেয়ের গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা বামন হয়ে চাঁদ দেখার মতো, এটা তাঁকে ছোট থেকে বুঝিয়ে দিয়েছে সমাজ। অল্প বয়সে, তাঁর ভজন-কীর্তন গাওয়াটাও গ্রামের মানুষ এক্কেবারে পছন্দ করত না। তবুও বাবা-মায়ের বিশ্বাসের উপর ভরসা রেখেই সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মিউজিকের শিক্ষাগুরু ইন্টারনেট। ফোনের মাধ্যমে ভিডিয়ো দেখেই গান শেখে সে। বসুন্ধরার কথায়, তাঁর গ্রামে মেয়েদের বাইরে বার হওয়ার উপরই কড়াকড়ি রয়েছে। সেখানে নিজের পরিচিতি তৈরি করাটা মারাত্মক কঠিন। কিন্তু এই ভাবনা তিনি পালটাতে চান।
এদিন বাবার সঙ্গেই এই সংগীত রিয়ালিটি শো-এর স্টেজে হাজির হয়েছিলেন বসুন্ধরা। তাঁর বাবার কথায়, ‘আমাকে লোকে এমনও বলেছে বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে গান করাচ্ছিস, ওর পয়সায় বসে খাবি নাকি’। কিন্তু জীবনে হেরে না হওয়ার জাদুমন্ত্র সঙ্গে নিয়েই বাঁচে বসুন্ধরা। অডিশন রাউন্ডে সারেগামাপা-র স্টেজে ‘সূর্যবংশম’ ছবির ‘তারে হ্যায় বারাতি’ গান পেশ করেন বসুন্ধরা। মেওয়াতের এই মেয়ের সুরের মূর্ছনায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান বিশাল দাদলানি, হিমেশ রেশমিয়া, শংকর মহাদেবনরা। জুরি প্যানেলের চোখের কোণ ভিজে আসে। কান্নাভেজা গলায় বসুন্ধরাকে বিশাল আশ্বাস দেন গায়িকা হওয়ার এই লড়াইয়ে আজীবন তিনি বসুন্ধরার পাশে থাকবেন।