সতীশ কৌশিকের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, এমনটাই জানা গিয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যু মামলা ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যায় শনিবার গভীর রাতে। দিল্লির এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী খুন করে থাকতে পারেন সতীশ কৌশিকে। খুনের কারণ হিসাবে সেই মহিলা জানান, সতীশ কৌশিকের থেকে ১৫ কোটি টাকা ধরা নিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু দেব দেব করেও ফিরত দিচ্ছিলেন না। সেই নিয়ে বুধবার দিল্লির হোলি পার্টিতে সতীশের সঙ্গে তুমুল বচসা হয় তাঁর স্বামী বিকাশ মালুর। তিনি নিশ্চিত সতীশের মৃত্যুতে তাঁর স্বামীর হাত রয়েছে, জানান সানভি মালু।
যে মানুষটা সুস্থ শরীরে ৭ ও ৮ই মার্চ হোলি পার্টিতে নাচাগানা করেছেন, মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্য়াটাকে তাঁর মৃত্যু ভাবিয়েছে অনেককেই। মৃত্যুর কয়েকঘন্টা আগেও অনুপম খেরের সঙ্গে সুস্থ অবস্থায় ফোনে কথা বলেছিলেন সতীশ কৌশিক। দিল্লির যে খামারবাড়িতে সতীশ কৌশিকের মৃত্যু হয়, সেখান থেকে কিছু সন্দেহজনক ওষুধ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। তবে কি এই খামারবাড়িতে সত্যি কোনও রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছিল? সতীশের মৃত্যুতে কি কোনও ফাউল প্লে রয়েছে? সানভি মালুর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখছে দিল্লি পুলিশ।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের আঙুল নিয়ে এবার মুখ খুললেন সেই ফার্ম হাউজের মালিক বিকাশ মালু, যেখানে শেষবার হোলি পার্টি করতে দেখা গিয়েছিল প্রয়াত অভিনেতাকে। হোলি পার্টির একটি ভিডিয়ো নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ব্যবসায়ী। যেখানে মহানন্দে হিন্দি গানে নাচতে দেখা যাচ্ছে সতীশ কৌশিককে। বিকাশ মালুর দাবি, অকারণে সতীশ কৌশিকের মৃত্যুর জন্য তাঁকে দায়ী করা হচ্ছে।
তিনি লেখেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে সতীশজি আমার পরিবার। লোকজনের এক মিনিটও সময় লাগলো না আমার নাম বদনাম করতে। আমি এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে এখনও মেনে নিতে পারিনি, আমাদের আনন্দ-উদযাপনের কয়েকঘন্টার মধ্যেই কী ঘটে গেল!’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজের নীরবতা ভাঙতে চাই, আমি জানাতে চাই একটা দুর্ঘটনা সবসময় অনাকাঙ্খিত, তবে সেটা আটকানোর শক্তি আমাদের নেই’।
দুবাই-কেন্দ্রিক ‘কুবের গ্রুপ’-এর শীর্ষকর্তা বিকাশ মালু। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে দামি দামি বিলাস সামগ্রী— একাধিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে এই সংস্থার। বিকাশ মালুর দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনেছেন। এই নিয়ে দিল্লি পুলিশের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘এক মহিলার তরফে সতীশ কৌশিকের মৃত্যু নিয়ে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। একজন ইনস্পেক্টরকে ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই তদন্তের। শীঘ্রই ওই মহিলাকে থানায় ডেকে বয়ান রেকর্ড করা হবে’।
সানভি মালু জানিয়েছেন, প্রায় তিন বছর আগে বিকাশ মালু নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য সতীশ কৌশিকের থেকে ১৫কোটি টাকা ধার নিয়েছিলেন। যা তিনি এখন ফেরত দিচ্ছিলেন না। এই টাকার লেনদেন নিয়ে সতীশ আর বিকাশের মধ্যে বিরোধ চলছিল। হোলি পার্টির ফাঁকে দুজনকে বচসায় জড়াতে দেখেন সানভি। তাঁর দাবি, সেই নিয়ে পরবর্তীতে স্বামী বিকাশকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘সতীশজি কি টাকা ফেরত চাইছিলেন?’ বিকাশ বলেন, ‘পাগল লোকটা যে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিল, তা করোনায় ডুবে গিয়েছে।’ পরে বিকাশ নাকি জানান, টাকা ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না কারণ ‘নীল বড়ির ওভারডোজে’ সতীশের প্রাণ যাবে। সানভি নিশ্চিত তাঁর স্বামী অভিনেতাকে বিষজাতীয় কিছু দেওয়ার জেরেই হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের জেরে সতীশের মৃত্যু মামলা ঘিরে রহস্য়ের জট ঘনাচ্ছে।