বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে অনীক দত্তর ‘অপরাজিত’। মুক্তির প্রথম দু সপ্তাহে ছবির কালেকশন প্রায় ৪ কোটি টাকা! হ্যাঁ, সত্যিই অবাক করছে কোনওরকম তারকাহীন ছবির এমন সাড়া জাগানো পারফরম্যান্স। শুধু মাত্র পশ্চিমবঙ্গে এই ছবি আয় করেছে ৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। অনীক দত্তের এই ছবির প্রেক্ষপট সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নেপথ্যের গল্প। যে পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্রে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন- সেই সত্যজিৎ রায়কে এই ছবির মাধ্যমে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন অনীক দত্ত। সত্যজিৎ-এর ভূমিকায় জিতু কমল-কে দেখে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক।
দর্শকরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে এই ছবিকে। অনীকের অপরাজিত ছবি দেখে ফেসবুক পোস্টে তথ্য ভুলের অভিযোগ তুলেছেন অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্তর ( বর্তমানে উমা সেন)। কে এই উমা দাশগুপ্ত? সত্যজিত রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ ছবিতে দুর্গার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উমা দেবী। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘মানিকদা আর আশিস বর্মণ আমার বাড়িতে এসেছিলেন,বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন দুর্গার চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে দেওয়ার জন্য। তখন বিজয়া রায় (সত্যজিতের স্ত্রী) আমাদের বাড়ি আসেননি। আমার নির্বাচনের অনেক পরে আমি মানিকদার বাড়ি গিয়েছিলাম, তখন প্রথম দেখা বিজয়া রায়ের সঙ্গে। দুর্গার ভূমিকায় আমার নির্বাচনের সঙ্গে উনি কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন না। আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, ১৩ বছর বয়স। ভুল তথ্য দেখানো কোনওভাবে গ্রহণযোগ্য নয়’।
এর আগে ফেসবুকে অনীকের ছবির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন অভিনেত্রীর মেয়ে শ্রীময়ী সেন রাম। শ্রীময়ী এবং উমা দেবীর অভিযোগ যদিও ‘অপরাজিত’ ছবির মূলত একটি দৃশ্যকে কেন্দ্র করেই। দুর্গার চরিত্রে উমাকে কীভাবে বাছা হয়, সেটি নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন অনীক দত্ত এমনটাই দাবি তাঁদের।
ফেসবুকে ঠিক কী লিখেছেন শ্রীময়ী?
ফেসবুক পোস্টে শ্রীময়ী লিখেছেন, ‘আমার মা উমা দাশগুপ্ত। নিয়মিত স্কুল থিয়েটারে অভিনয় করতেন। মায়ের স্কুলের সহ প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচিত। সত্যজিৎ রায় তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, একজন অভিনেত্রী খুঁজে দিতে, যে দুর্গার চরিত্র করবে। পারিবারিক বাসভবনে আমার দাদু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে একটা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বৈঠকেই করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সর্বজয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আমার মায়ের মিল খুঁজে পান সত্যজিৎ রায়। এরপরের ঘটনা বহু পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে। আমার দাদু খুবই রক্ষণশীল মানুষ ছিলেন, সে সময়ে বাড়ির মেয়ে সিনেমায় অভিনয় করবে সেটা ভাল চোখে দেখা হত না। তাই দাদু প্রথমটায় রাজি হননি। পরে অবশ্য তিনি রাজি হন এবং এর জন্য একটা পয়সাও সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে দাদু নেননি। কিন্তু এই ডকুফিচার অর্থাৎ অপারজিত ছবিতে দেখানো হয়েছে, অপরাজিত রায়ের বাড়িতে একটি মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে অপরাজিত রায়ের তাঁকে পছন্দ হয় না। পরে অপরাজিত রায়ের স্ত্রী বিমলা, মেয়েটিকে শাড়ি পরিয়ে সামনে নিয়ে আসলে অপরাজিত দুর্গা হিসেবে সেই মেয়েটিকে বেছে নেন।’
শ্রীময়ী সেন তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, ‘এই ছোট্ট তথ্য হয়তো সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, অন্তত এত বড়মাপের একটি সিনেমার ক্ষেত্রে। তবে আমার মনে হয়, পরিচালকের আরও একটু গবেষণা করা উচিত ছিল।'
তবে এত বড়মাপের একটা ছবি তৈরির ক্ষেত্রে এইটুকু স্বাধীনতা একজন পরিচালক নিতেই পারেন, মত নেটিজেনদের। অনীকের ‘অপরাজিত’তে উমা (এখানে দুর্গার আদলে তৈরির চরিত্রের নাম এটি)-র ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অনুশা বিশ্বনাথননকে।