আজ ‘তাঁর’ জন্মদিন। ২ মে মঙ্গলবার ভারতের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী। যাঁর পরিচালনায় তৈরি বাংলা ছবির দল গোটা বাংলা ছবির আঙ্গিক,মেজাজ,প্রকৃতি সব খোলনলচে বদলে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলা ছবিকে এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ছবির স্বীকৃতি। তাঁর লেখা গল্প,উপন্যাস আজও বাংলা সাহিত্যের শুধুই 'ক্লাসিক' নয়,বরং বেস্টসেলারের তালিকায় এখনও শীর্ষে। সত্যজিতের মৃত্যুর ২৯ বছর পরেও! এই সামান্য উদাহরণ থেকে সহজেই অনুমেয় বাঙালির কাছে আজও তিনি কতটা মূল্যবান।
প্রতি বছর ২ মে বিশপ লেফ্রয় রোডের বিরাট হলুদ রঙের ম্যানসনটির গোটা তিনতলা জুড়ে সারাদিনব্যাপী শোনা যায় পায়ের শব্দ। রাজ্য ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন প্রয়াত এই শিল্পীর উদ্দেশে। নানা কিসিমের ফুল ও মিষ্টির গন্ধে ম' ম' করে গোটা রায় বাড়ি। অভ্যাগতদের পানীয় ও মুখরোচক খাবার সহযোগে নিজের হাতে আপ্যায়ন করেন সন্দীপ রায়ের স্ত্রী ললিতা রায়। প্রতিবার নিয়ম করে। পাশাপাশি সত্যজিৎ-পুত্র প্রখ্যাত পরিচালক সন্দীপ রায়কে ঘিরেও শুরু হয় অনুরাগীদের না শেষ হওয়ার প্রশ্নের তালিকা। প্রসঙ্গত,গত বছর থেকেই এই অস্কারজয়ী পরিচালকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আগ্রহ। স্বয়ং সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ও জানিয়েছিলেন সত্যজিৎবাবুর জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন নিয়ে হরেকরকম পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু বর্তমানে ফের একবার করোনার হানায় সেসব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় টালমাটাল গোটা দেশ। প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যার সঙ্গে প্রাণহানি। এমতবস্থায় সত্যজিতের জন্মশতবার্ষিকীতে রায় বাড়ির দরজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রায় পরিবারের তরফে। সহজ কথায়, এদিন বন্ধই থাকছে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশপ লেফ্রয় রোডের প্রবাদপ্রতিম ১ নম্বর বাড়িটি।
এ প্রসঙ্গে সন্দীপ-পত্নী ললিতা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়,' ব্যাপারটা ভাবতেও খারাপ লাগছে। আমরা সবাই জানি এবং বুঝি সত্যজিৎ রায় বাঙালির কাছে ঠিক কী। ওঁনার জন্মদিনে আমাদের বাড়ির দরজা সবসময়ই খোলা থাকে তাঁর অনুরাগীদের জন্য। তবে আবেগ সরিয়ে রেখে বাস্তবের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে বুঝতে পারব এইমুহূর্তে কতটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে দেশ যাচ্ছে। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্ৰমণ। তাই সবদিক বিবেচনা করেই সবার সুস্থতা কামনার উদ্দেশে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।' এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ' প্রতি বছর ওঁনার জন্মদিনে সারাদিন ধরে একনাগাড়ে আমাদের বাড়িতে অতিথি সমাগম বারেবারে আমাদের উপলব্ধি করায় এখনও কতটা তাঁকে ভালোবাসে মানুষ। এই ঘটনা আমাদের কাছেও অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু বর্তমানে আমরা নিরুপায়। বাস্তব বড় রুক্ষ ও নিষ্ঠুর। তাই সকলের উদ্দেশে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের।'