রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের আশঙ্কা প্রকাশ করে গত ৮ই মে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল মমতা সরকার। সেই রায়ের উপর এদিন স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায় বাংলার হলে অবিলম্বে ফেরাতে হবে এই ছবি। স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ছবির নির্মাতারা।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন (Sudipto Sen)। মমতা এই ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর আফসোসের সুরে পরিচালক বলেছিলেন, ‘দিদি আগে আমার ছবিটা দেখুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন’। এদিন ফের মমতাকে এই ছবি দেখবার আমন্ত্রণ জানালেন পরিচালক। বললেন, ‘দিদি, একবার ছবিটা দেখুন প্লিজ। আপনারও ভালো লাগবে’।
জি চব্বিশ ঘন্টাকে পরিচালক জানান, ‘সকলকে ধন্যবাদ আমাদের পাশে থাকার জন্য। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার মেসেজ পাচ্ছিলাম পশ্চিমবঙ্গবাসীর থেকে, তাঁরা ছবিটা দেখতে চেয়েছিল।’ এরপর পরিচালকের সংযোজন, ‘বাঙালি হিসাবে আজ আমার বিশেষ গর্বের দিন। আমার দিদিকে ভুল বোঝানো হয়েছিল এই ছবিটা নিয়ে। দিদি এই ছবিটা দেখবেন, আপনারা সবাই দেখবেন। এটা ভারতের ইতিহাসের অন্যতম চর্চিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ছবি। পশ্চিমবঙ্গ তো ভারতের ডেমোক্রেসির ক্যাপিটাল, সেখানে বাক স্বাধীনতাকে সবসময় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমি ভীষণ খুশি’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি পরিচালক সুদীপ্ত সেন। জলপাইগুড়ির ছেলে সুদীপ্ত, দক্ষিণের ছবিতে কাজ করেছেন। তৈরি করেছেন একাধিক তথ্যচিত্র, তবে তাঁকে এক ঝটকায় লাইমলাইটে এনে দিয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ছবি নিয়ে হয়ত কেউ ভুল বুঝিয়ে একথা বারেবারে বলেছেন পরিচালক। শিল্পীর স্বাধীনতার হয়ে অতীতে সওয়াল করেছেন মমতা, ‘পদ্মাবত’ প্রসঙ্গ টেনে সে কথা স্মরণ করান তিনি।
পরিচালক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,'বাঙালি ছেলে একটা ছবি বানিয়েছে, আর সেটা না দেখেই বন্ধ করে দেব! এটা হয় নাকি কখনও? উনি তো আমাদের অভিভাবক। ওঁনার পছন্দ না হলে উনি আমাকে ডাকুন। আমি কথা বলি ওঁর সঙ্গে…দরকার হলে ‘সরি’ বলব ওঁনাকে'।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রাজ্য। আদালত স্পষ্ট জানায়, 'আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা তো আপনাদের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যের বাধ্যবধকতা আছে। আপনি যে কোনও ১৩ জন লোককে তুলে নিতে পারেন এবং তাঁরা বলতে পারেন, যে কোনও কিছু নিষিদ্ধ করে দেওয়া হোক। যদি না সেটা খেলাধুলো বা কার্টুন হয়।'
সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর রাজ্যে কবে থেকে দেখা যাবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’? সে প্রসঙ্গে রাজ্যে ছবির ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা জানান, ‘এখনও আদালতের রায়ের কপি হাতে আসেনি। ইতিমধ্যেই প্রচুর ফোন আসছে হলমালিকদের। তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করছেন ছবিটা দেখাতে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনই বলতে পারছি না।’