দীপা মেহতার পরিচালনায় ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় ‘ফায়ার’। সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে এই ছবি, এমনটাই বলেন সমালোচকরা। সমকামিতা তথা লেসবিয়ান সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছিল ফায়ার। দুই জা-এর মধ্যেকার প্রেম সম্পর্ক, যৌনতা এসেছিল নন্দিতা দাস ও শাবানা আজমি অভিনীত এই ছবিতে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘ফায়ার’-এ অভিনয় করা নিয়ে নিজের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা বললেন শাবানা। আজও সমকামিতা ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় ট্যাবু হিসাবেই গণ্য করা হয়। ২৮ বছর আগে পর্দায় সেই ছবি তুলে ধরা মোটেই সহজ হবে না জানতেন শাবানা। তিনি বলেন, 'আমি যখন ছবির চিত্রনাট্য পড়লাম, আমার দুর্দান্ত লেগেছিল। কিন্তু আমার এই ছবিটা করব কিনার চেয়ে বেশি আমাকে ভাবাচ্ছিল, আমার কি এই ছবিটা করা উচিত? ভাবছিলাম, এই ছবিটা মুক্তি পেলে তারপর কী ঘটবে?
শাবানা আরও বলেন, আমার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করলেও ভাবলাম, সব দর্শক তো সমান হয়। হয়ত অনেকে অপছন্দ করবে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবে, তবে অনেকে পছন্দও করবে। আমি এরপর জাভেদ সাহাবকে জিগ্গেস করি। উনি জানতে চাইলেন, আমার চিত্রনাট্য ভালো লেগেছে কিনা। হ্যাঁ, বলতেই সটান বললেন- তাহলে অবশ্যই আমার ছবিটা করা উচিত। একইসঙ্গে স্বামী অভিনেত্রীকে সচেতন করেছিলেন, এই ছবি মুক্তি পেলে বিতর্ক অবধারিত। তাই শুরুতেই নিশ্চিত হতে হবে শেষ পর্যন্ত তুমি নিজের সিদ্ধান্তে টিকে থাকতে পারবে, এবং নিজের কাজের পক্ষে সওয়াল করতে পারবে।
দীপা মেহতার মতো পরিচালক এই সংবেদনশীল বিষয়কে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, তাই শুরু থেকেই বাড়তি কনফিডেন্স পেয়েছিলেন শাবানা। তবে শ্যুটিংয়ের প্রথম দিনই চরম বিপত্তিতে পড়েন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, প্রথম দিনই পরিচালক তাঁকে এবং নন্দিতা দাসকে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের মহড়া দিতে বলেন। তাতেই বিপত্তি! শাবানা আজমি বলেন, সেইসময় নন্দিতা দাসকে তিনি চিনতেন না। প্রথম প্রথম দৃশ্যে পরিচালক নন্দিতাকে শাবানার ঠোঁটে আঙুল রাখার নির্দেশ দেন। শাবানার কথায়, ‘সেটা একেবারেই রোম্যান্টিক ছিল না। দীপা চিৎকার করে বলে, আমি তোমাকে ওর দাঁত মেজে দিতে বলিনি। চরম অস্বস্তি কাজ করেছিল, তবে দীপা আমাদের একটা সুস্থ পরিবেশ দিয়েছিল। ওহ নিশ্চিত করেছিল, শ্যুটিংয়ে বাড়তি একটা লোকও থাকবে না। আমরা দুজন, পরিচালক নিজে এবং ক্যামেরাম্যান। ঘনিষ্ঠদৃশ্যের শ্যুটিংয়ে ফ্লোরে আর কেউ থাকত না।’
প্রাথমিকভাবে এই ছবি মুক্তি পেলেও ব্যাপক রোষের মুখে পড়তে হয় সিনেমাহল মালিকদের। বেশ কিছু হিন্দু সংগঠন ভাঙচুর চালায় সিনেমা হলে। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকও আপত্তি জানানোর পর ফায়ার সমায়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় ভারতে। যদিও বর্তমানে ইউটিউবে নিখরচায় দেখে নিতে পারবেন এই ছবি।