আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে কলকাতায় এলেন শাহরুখ খান। মঞ্চে তাঁর একটি বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল এদিন। একই সঙ্গে এটি হয়ে উঠল জাতীয় স্তরের আলোচনার বিষয়ও। কী বলেছেন শাহরুখ?
শাহরুখ বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া কখনও কখনও ক্ষুদ্র মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি মানুষকে তাঁর অনৈতিকতার মধ্যে আটকে রাখে। কোথায় একটা পড়েছি, নেগেটিভিটির কারণে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। এই ধরনের মানসিকতা অনেকের মধ্যে একসঙ্গে বিভেদের এবং ধ্বংসের মানসিকতাকে বাড়াচ্ছে।’
হালে ‘পাঠান’ ছবির ‘বেশরম রং’ গানটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে দীপিকা পাড়ুকোনের গেরুয়া পোশাকের কারণে অনেকে এটিকে ধর্মের রং দিয়েছেন। আর তাঁদের লক্ষ্য করেই যে শাহরুখের এই উক্তি, তা টের পাওয়া গিয়েছে।
এদিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হল ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে গোটা অনুষ্ঠান এগিয়ে চলেছে। বাংলার অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ খান থেকে বাংলার জামাই অমিতাভ বচ্চন, কুমার শানু, অরিজিৎ সিং, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রানি মুখোপাধ্যায় কে উপস্থিত ছিলেন না! কিন্তু দর্শকরা কার বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন সেটা উপস্থিত সকলেই বেশ ভালো মতোই বুঝতে পারছিলেন । আর তাই যখন সেই কিং খান মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে এলেন গোটা স্টেডিয়াম উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।
সাদা শার্ট এবং কালো স্যুটে বাদশাহ সকলের নজর কাড়েন। ডায়াসে এসে দাঁড়াতেই সকলে হাততালি দিয়ে উঠেন। অভিনেতা তথা বাংলার রাষ্ট্রদূত শাহরুখ খান বলেন তিনি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা দিয়েছেন যে তিনি বাংলায় এলে বাংলাতেই কথা বলবেন। অভিনেতার কথায়, 'কাউকে না পেয়ে রানিকে ধরেই, ওকে বকে, বুঝিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখিয়েছি বাংলায়। তাই যদি ভালো পড়ি আমার প্রসংশা করবেন, আর খারাপ হলে ওকে ধরবেন।' শাহরুখের এই কথায় সকলেই হেসে ফেলেন। তারপর তিনি আবার বলতে শুরু করেন, 'কলকাতায় এসে খুব ভালো লাগছে, আমার প্রিয়, সুন্দর রানিকে দেখে খুব খুশি আমি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি, কুমার শানু, ভাট সাহেব, অমিতাভ জি সকলকে দেখেই খুব খুশি। আমি এখানে প্রায় দুই বছর আসিনি। কিন্তু আপনাদের সবাইকে দেখে সব থেকে বেশি খুশি হলাম, সত্যি বলছি।'
দেবদাসের পারোকে যেভাবে তিনি 'সত্যি বলছি!' বলতেন, সেই এক টোনেই তাঁকে এবারেও 'সত্যি বলছি' বলতে শোনা যায়। তাঁর বক্তব্য এক ঝলকের জন্যেও হলেও সেই কালজয়ী ছবির কথা দর্শকদের মনে করাবেই। অভিনেতা এরপর বলেন, 'কলকাতার রাষ্ট্রদূত বলে নয়, কলকাতায় এসে যে ভালোবাসা পাবেন সেটা আর অন্য কোথাও পাবেন না। এটা ভালোবাসার শহর।' অভিনেতাকে এই গোটা বক্তব্যটার অধিকাংশই বাংলায় বলতে শোনা যায়। ফলে রানি মুখোপাধ্যায়ের লেখা স্ক্রিপ্ট এবং তাঁর বলা দুই দারুন নম্বর পেয়ে যে পাশ করে গিয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দাঁড়িয়ে সিনেমা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'সিনেমার মাধ্যমে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিন সহজে তুলে ধরা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া যে সংকীর্ণতা এনে দেয় মানুষের জীবনে, সিনেমা সেটা ভেঙে একটা বৃহত্তর জীবনের, জগতের খোঁজ দেয়। সিনেমার মাধ্যমে ভাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা ছড়ানো যায়। আসুন আমরা সবাই মিলে সিনেমার জন্য একটা দারুন পৃথিবী গড়ে তুলি। আর কলকাতাই হোক সেই জায়গা যেখানে থেকে এই উদ্যোগের সূচনা হবে।'
অভিনেতাকে এই মঞ্চ থেকে ক্যামেরা নেপথ্যে যাঁরা থাকেন, অথচ একটা ছবিতে যাঁদের অবদান অনেকটা তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায়। তিনি কুমার শানু এবং অরিজিৎ সিংকে ধন্যবাদ জানান তাঁর কণ্ঠ হয়ে ওঠার কারণে। আর সব কিছুর মাঝে তিনি বিগ বির সঙ্গে মজা করতে ভোলেন না। বলেন, 'উনি সব দিক দিয়েই সুন্দর। ক্যামেরার সামনে, পিছনে, সাইডে, সব জায়গায়।'
মিনিট পাঁচেকের বক্তব্যে যেমন সিনেমা নিয়ে গুরুগম্ভীর কথা বলেন, নতুন দিশা দেখান তেমনই বাংলায় মিষ্টি করে বক্তব্য রেখে সকলের মন জিতে নেন নতুন করে, বাদ দেন না মজা করতে কিংবা নিজের আগামী ছবি পাঠানের প্রচার করতে। আর শেষ পাতের মিষ্টি হিসেবে সকলের জন্য রেখে যান তাঁর একটি ডায়লগ। 'আপনি কুরসিকে পেটি বাঁধ লিজিয়ে, মৌসম বিগাড়নে ওয়ালা হ্যায়....'
কিং খান আশাবাদী এখন সমস্ত খারাপ সময় কেটে গিয়েছে, দুনিয়া ফের সুস্থ হচ্ছে, আমরা সবাই ভালো আছি, তাই 'দুনিয়া যাই করে নিক সমস্ত ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন মানুষরা বেঁচে আছি।' অভিনেতার কথায়, 'জিন্দা হ্যায়!'