দিকে দিকে উঠছে ‘লাল সেলাম’ স্লোগান, তরুণ কমরেডদের কাঁধে চড়ে শেষবার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরোলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একদম সামনে শতরূপ ঘোষ। এই তরুণ বাম নেতার আদর্শ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তা কারুর অজানা নয়। শতরূপের ফেসবুকের কভার ছবি হোক বা হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি, সবতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
বাংলাদেশ নিয়ে যখন গোটা দেশ চিন্তিত, তার মাঝেই এমন দুঃসংবাদ আসবে কে জানতো! বৃহস্পতিবার সকালে সকলকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সকাল ৮টা ২০ নাগাদ পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই চিরনিদ্রায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মৃত্য়ুর খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছেন শতরূপ ঘোষ। প্রবীণ নেতাকে স্মরণ করে টিভি নাইন বাংলাকে শতরূপ বলেন, ‘বুদ্ধদা অনেকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন। আমার খালি মনে হত, এত ভাল একজন মানুষের এত কষ্ট পাওয়া প্রাপ্য ছিল না। তিনি প্রকৃত অর্থেই একজন সৎ মানুষ। সত্যি-সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নিজের পরিবার ভাবতেন। এই রাজ্যটার ভাল করতে চেয়েছিলেন। ভাল করেওছেন। তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। বহু মানুষের অনেক ভালবাসাও পেয়েছেন। তিনি কিন্তু বিরোধী দলের সমর্থকদের থেকেও অনেক সম্মান পেয়েছেন।’
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের থেকে অনেক স্নেহ পেয়েছেন, পেয়েছেন অফুরান ভালোবাসা। স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে শতরূপ জানিয়েছেন, দেখা হলেই সিনেমা আর গান নিয়ে প্রশ্ন করতেন বুদ্ধদেব। কোন ভালো ছবি শতরূপ দেখেছেন, কার গান ভালো লাগছে তা জানতে চাইছেন। জয়ের স্বাদ না পেলেও কসবা এলাকা থেকে তিনবার ভোটে লড়েছেন শতরূপ। কোনওরকম ভুলভ্রান্তি হলেই ফোন আসত বুদ্ধদেবের, সংশোধন করে দিতেন শতরূপকে। সেগুলোই আজ বড্ড মনে পড়ছে যুবনেতার।
ফ্রক পরা বাচ্চা মেয়েটিকে আদরে ভরাচ্ছেন ‘মামা’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য,খুদেকে চিনলেন?
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোকসন্তপ্ত। তিনি বলেন, 'আমি রবীনবাবুকে বলেছি দলের সঙ্গে কথা বলতে। পিস ওয়ার্ল্ডের বদলে যদি ওরা (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর) দেহ রবীন্দ্রসদন – নন্দন চত্বরে রাখতে চান রাখতে পারেন। বিধানসভাতেও দেহ নিয়ে যেতে বলেছি। উনি দীর্ঘদিনের জন প্রতিনিধি ও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওনার মৃত্যুতে আমরা আজকে ছুটি ঘোষণা করেছি। আগামীকাল আমরা ওনাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে শেষকৃত্য করতে চাই।
বুদ্ধবাবুর স্মরণ করে মমতা বলেন,‘বউদি বললেন, উনি আজ সকালেও ব্রেকফাস্ট করেছেন। তার পরই শ্বাসকষ্টটা শুরু হয়। তার পরই উনি চলে গেছেন। তিনি পার্থিব জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু মানুষের জগতে বিচরণ করবেন। একটা মানুষ মরে গেলে তার জীবন শেষ হয়ে যায় না। তাকে মানুষ মনে রাখে তার কাজের মধ্যে দিয়ে'।
এদিন পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ। ইতিমধ্যেই চক্ষুদান সম্পন্ন হয়েছে। আগামিকাল সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভার উদ্দেশ্যে যাত্রার সঙ্গে শুরু হবে বুদ্ধদেবের অন্তিম সফর। বিধানসভা ভবনে সকাল ১১-১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত শায়িত রাখা হবে দেহ। এরপর মুজফফর আহমেদ ভবন (দুপুর ১২-৩.১৫ মিনিট) এবং দীনেশ মজুমদার ভবনে (৩.৩০-৩.৪৫ মিনিট) পৌঁছাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নিথর দেহ। এরপর দেহদানের জন্য নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে শেষযাত্রা।