'পানির প্রযোজক বলে ছিল, আমরা সুশান্তকে নিয়ে পানি তৈরি করব না,পানি তৈরি হবে না',সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন পানির পরিচালক শেখর কাপুর। সুশান্তের স্মরণে মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম আলোচনায় নাম না করেও প্রযোজক সংস্থা যশরাজ ফিল্মসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন এই বর্ষীয়ান পরিচালক।
সুশান্তের সঙ্গে সোনচিড়িয়া ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন মনোজ। অন্যদিকে শেখর কাপুর তাঁর ড্রিম প্রজেক্ট পানির হিরো হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুতকে। যদিও কোনওদিন শ্যুটিং ফ্লোরেই যায়নি এই ছবি।
মনোজ বাজপায়ী শেখর কাপুরকে প্রশ্ন করেন,সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি কোন বিষয়টি তাঁকে কষ্ট দিছে? জবাবে পরিচালক জানান, 'কষ্ট তো সেই জিনিসটাই দিচ্ছে যেটা আমি করতে পারিনি। পানির প্রযোজক আমাকে বলেছিল, আমরা সুশান্তকে নিয়ে পানি তৈরি করব না,পানি তৈরি হবে না। যদিও অন্য কোনও ছবিও বানাতাম ওকে নিয়ে! কিন্তু আমি রাগে,দুঃখে ভারত ছেড়েই চলে গেলাম'।
শেখর কাপুর যোগ করেন, গত ছয় মাসে সুশান্তের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ ছিল না,এটা বড় আক্ষেপ তাঁর। ‘ছবির কথা না থাকলেও অন্য অনেক কথাই তো বলতে পারতাম, না হয় কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কথাই বলে নিতাম’, আক্ষেপের সুর ছিল তাঁর গলায়।
সুশান্তের আত্মহত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যেই যশরাজ ফিল্মসের কাছে সুশান্তের চুক্তিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিল মুম্বই পুলিশ। শনিবার আদিত্য চোপড়ার এই সংস্থা সেই চুক্তিপত্রের কপি তুলে দিয়েছে তদন্তকারী অফিসারদের হাতে।
ঠিক কী ঘটেছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের ড্রিম প্রজেক্ট পানির সঙ্গে?
২০১২ সালের ৩০ শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে পানির ঘোষণা সারে প্রযোজক সংস্থা যশরাজ ফিল্মস। যদিও সেই ঘোষণায় ছবির কাস্টের নাম উল্লেখ ছিল না। তবে বলা হয়েছিল ২০১৩-র মাঝামাঝি সময় থেকেই পানির শ্যুটিং শুরু করবেন পরিচালক শেখর কাপুর।
যদিও শেখর কাপুর পানির ঘোষণা সেরেছিলেন আরও আগে, ২০১০ সালের কান চলচ্চিত্র উত্সবে। ২০১২-র অক্টোবরে যশ রাজ ফিল্মসের তরফে জারি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয় ২০৫০ প্রেক্ষাপটে তৈরি হবে পানি, যেখানে ফুটে উঠবে জলের সমস্যা। এরপর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখর কাপুর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানান- তাঁর ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা যাবে সুশান্ত সিং রাজপুতকে।ছবির নায়িকা হবেন পাশ্চাত্যের কোনও নায়িকা। ছবির শ্যুটিং শুরু হবে ২০১৪-র মাঝামাঝি সময়ে। যদিও সেই কাজ শুরু হয়নি। বছর ঘুরে যায়, এরমধ্যেই ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে যশরাজ ব্যানারে রিলিজ করে সুশান্তের কেরিয়ারের তৃতীয় এবং এই হাউসে প্রয়াত অভিনেতার দ্বিতীয় ছবি ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী। ২০১৫'র শেষের দিকে মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে পানি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে প্রযোজক সংস্থা যশরাজ ফিল্মস।
ডিএনএ'তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পানির জন্য সঞ্জয় লীলা বনশালির রামলীলা ও অভিষেক কাপুরের ফিতুর ছবির অফার ফেরাতে হয়েছিল সুশান্তকে। কারণ তিনি যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। শোনা যায়,পানি বন্ধ হওয়ায় আদিত্য চোপড়া সুশান্তকে কথা দিয়েছিলেন তাঁর পরিচালনায় বেফিকরে ছবিটিতে অভিনয় করবেন সুশান্ত। কিন্তু তাঁকে কিছু না জানিয়েই সেই ছবিটিতে কাস্ট করা হয় রণবীর সিংকে। এরপরই আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে মনোমালিন্য হয় সুশান্তের। তিনি যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ২০১৫ সালের ১০ই ডিসেম্বর ডিএনএতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যশরাজ ফিল্মসের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে. ‘সুশান্ত আর আমাদের ট্যালেন্ট টিমের অংশ নয়। আমরা ওর ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা জানাই’।
পানি বন্ধ হওয়া নিয়ে সেই সময় বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি প্রযোজক সংস্থা বা পরিচালকের তরফে। এই নিয়ে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে প্রথমবার শেখর কাপুর মুখ খোলেন ২০১৭ সালে। টুইটারে শেখর কাপুর লেখেন,'সুশান্ত তুমিও ততটা ধ্বংস হয়েছ যতটা আমি হয়েছি পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি আজ পর্যন্ত তোমার মতো এত অসাধারণ একজন অভিনেতাকে দেখেনি যে নিজের চরিত্রের জন্য এতটা পরিশ্রম করে'। এই টুইটের জবাবে সুশান্ত লিখেছিলেন, 'আমি আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, আমি আপনার থেকে যা শিখেছি বা যেগুলো আপনার জন্য ভুলতে পেরেছি,অনেক শ্রদ্ধা'।
রবিবার সুশান্তের মৃত্যুর খবর সামনে আসবার পরই একটি টুইট করেন শেখর কাপুর, যেখানে তিনি লেখেন, প্রিয় সুশান্ত তোর অনেক কিছু দেওয়ার ছিল..হয়ত এই দুনিয়াটা তোর মতো মানুষের জন্য বিশ্বাসযোগ্য ছিল না..তোর এভাবেই চলে যাওয়াটা ঠিক হল না..কিন্তু এটাও ঠিক তুই তো একটা অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর যুবক শরীরে আবদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডারে সমৃদ্ধ একটা বৃদ্ধ পেঁচা ছিলিস..তাই বোধহয় এত তাড়াতাড়ি উপর থেকে ডাক এসে গেল'।
এরপর সোমবার আরও একটি বিস্ফোরক টুইট করেন শেখর কাপুর। তিনি লেখেন, আমি জানি তুই কোন যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলিস। আমি জানি সেই সব মানুষের কথা যারা তোকে খুব বাজেভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।তুই আমার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেছিস।যদি শেষ ছ’টা মাসও আমি তোর পাশে থাকতাম..যদি তুই আমার কাছে অন্তত একবার ফিরে আসতিস। তোর সঙ্গে যা হয়েছে এর কর্মফল ওদের ভোগ করতে হবে। এটা তোর দোষ নয়’।