শনিবার কলকাতায় এসে সবাইকে সুরের মুর্চ্ছনায় ভাসালেন শ্রেয়া ঘোষাল। আরজি করের ৩১ বছরের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সেপ্টেম্বর মাসের কলকাতা কনসার্ট পিছিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯ অক্টোবর জমল আসর। একাধিক ভিডিয়ো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়াতে। বিশেষ করে যেভাবে তিনি আরজি করের প্রতিবাদে শেষ গানটা গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান তিনি।
তবে শুধু প্রতিবাদের গান নয়, ‘ঘুম ঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা’ গেয়ে সন্ধ্যাশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কেও ট্রিবিউট দিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা, ‘আপনি যদি রেট্রো বাংলা গানের একজন বড় ভক্ত হন, তাহলে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী 'গীতাশ্রী' সন্ধ্যা মুখার্জির প্রতি গানের রানী শ্রেয়া ঘোষালের এই বিশেষ ট্রিিউট মিস করবেন না। আজ কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে…।’
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার সংগীত জগতের নক্ষত্র ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সন্ধ্যা। বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর থেকেই গানের তালিম পেয়েছিলেন। মাত্র ১২ বছর অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সের সংগীত প্রতিযোগিতায় (ভজন বিভাগ) প্রথম হয়েছিলেন। সেটাই ছিল শুরু। তারপর থেকে বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় মন মাতিয়েছেন তিনি। পেশাদারি সংগীত জীবনের শুরুতেই মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন। গেয়েছিলেন 'তারানা' সিনেমায়। পরবর্তী একাধিক হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। সঙ্গে বাংলা সংগীতের জগতও আলোকিত হয়ে উঠেছিল সন্ধ্যা যুগে। তাঁর গলায় ‘এই পথ যদি না শেষ হয়….’, 'ঘুম ঘুম চাঁদ...', 'আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি...'-র মতো গান আজও বাঙালির মননে অমলিন রয়েছে।
সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার সময় শ্রেয়া সোশ্যাল মিডয়ায় লিখেছিলেন, ‘শ্রেয়া ঘোষালের অবস্থানকে সাধুবাদ জানাই। আর জি কর নিয়ে আমাদের সকলের মত তিনিও উদ্বিগ্ন। ১৪ই সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি সারা দেশ ও বিশ্বের মহিলাদের সুরক্ষার কথা বলেছেন। কারণ এই ধর্ষণ-খুনের সামাজিক সমস্যা, অপরাধটা নিয়ে সর্বত্রই প্রতিবাদ দরকার। এটা শুধু বাংলার ইস্যু নয়।’
শ্রেয়ার উদ্দেশে এক নেট-নাগরিক লেখেন, ‘এমন প্রতিবাদের নজির আগে কখনও দেখেনি শহর কলকাতা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তখন দর্শকে ছয়লাপ। এতবছর ধরে প্রতিটা কনসার্টেই সর্বশেষ গান হিসেবে 'মেরে ঢোলনা' গেয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু এবার তা হলো না। মেরে ঢোলনা গাওয়া শেষ করে শ্রেয়া বললেন, 'এর পরের গানে কেউ হাততালি দেবেন না। শুধু শুনুন।' গান শেষ হতেই একটা কথাও না বলে সোজা মঞ্চ ছাড়লেন শ্রেয়া। সেই সম্পূর্ণ ভিডিওটা রইলো সকলের জন্যে। তিলোত্তমার বুকে প্রতিবাদের স্বরকে তীব্রতর হতে দেখলাম আজ। বেঁচে থাক শ্রেয়া আর ওঁর সঙ্গীত সাধনা।’