সিদ্ধার্থ শুক্লার অকাল মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর পরিচিত মানুষজনকে। কিন্তু শোকপ্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় নিস্তবব্ধতা, নীরবতার বড়ই অভাব আজকের যুগে। অন্তরের শোক-এর তুলনায় দেখনদারিটাই যেন অনেক বেশি জরুরি। সুশান্তের মৃত্যুর পর ব্যাপক বিতর্কের ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেই স্মৃতি এখনও টাটকা… এর মাঝেই আরও এক তারা অকালে খসে পড়ল। নেটমাধ্যমে যেভাবে সিদ্ধার্থের শেষকৃত্যের ছবি, ভিডিয়ো, পোশাকি সমাবেদনা উপচে পড়েছে তাতেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল অনুষ্কা শর্মার নাম।
কমেডিয়ান জাকির খানের একটি বিবৃতি এদিন ইনস্টাগ্রাম পোস্টে শেয়ার করে নেন অনুষ্কা। সেখানে জাকির ব্যক্তি করেছেন, কেমনভাবে একজন তারকার মৃত্যু এখন ‘তামাশা’য় পরিণত হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার সিদ্ধার্থ শুক্লার শেষকৃত্যের মিডিয়া কভারেজের দিকেই ছিল জাকিরের নিশানা।
হিন্দিতে জাকির যা লিখেছেন তার বাংলা তর্জমা করতে দাঁড়ায়, ‘ওঁরা তোমায় মানুষ বলে গণ্য করে না। তাই কোনও সীমা নেই। তোমার মৃতদেহ ওঁদের কাছে একটি শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া আত্মা নয়। ওঁদের কাছে তোমার মৃত্যু আসলে ছবি তোলার একটি সুযোগ। যত বেশি ছবি তোলা যায় তত ভাল। ওঁদের কিছু যায় আসে না।’
জাকির আরও লেখেন, ‘এটা ঠিক তেমনই যেমন একটা দাঙ্গায় জ্বলতে থাকা বাড়ির ভিতর থেকে বাসন চুরি করা। কারণ এরপর সেগুলো আর কী কাজে আসবে? খুব বেশি হলে ১০টা ছবি. পাঁচটা প্রতিবেদন, তিনটি ভিডিয়ো, দুটো স্টোরি আর একটা পোস্ট… ব্যাস এইটুকুই… তোমার মৃত্যু তামাশা হয়েই থাকবে, কান্নায় ভেঙে পড়া মা-ও তামাশা, যন্ত্রণায় কাতরানো বাবাও তামাশা, সংজ্ঞাহীন বোনেরা, হিম্মত ভেঙেছে যে ভাইদের তাঁরা, তোমার প্রিয়জনেরা সকলে এক একটা তামাশা…’।
জাকির এই পোস্টে কোথাউ সিদ্ধার্থের নাম উল্লেখ করেননি, তবে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, তার এই পোস্টের উদ্দেশ্য বা প্রেক্ষাপট। অনুষ্কাও কোনওরকম শব্দ খরচ না করেই নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এই পোস্ট শেয়ার করে নিয়েছেন। এর আগে অনুষ্কা শর্মা সিদ্ধার্থের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে লেখেন, ‘শান্তিতে ঘুমিও সিদ্ধার্থ… তোমার পরিবার ও বন্ধুদের জানাই গভীর সমবেদনা’।
সিদ্ধার্থের শেষকৃত্যের মিডিয়া কভারেজকে ‘অসংবেদনশীল’ আখ্যা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দিশা পারমার, গওহর খানের মতো টেলিভিশন তারকা। লজ্জিত ও ক্ষুদ্ধ পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়, কুশল টন্ডনরা সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ করেছেন সাময়িকভাবে।
গওহর লেখেন, ‘এটা লজ্জাদনক! এই ধরণের কভারেজের জন্য প্রত্যেক মিডিয়া হাউজের নিজেদের উপর লজ্জা হওয়া উচিত।…. লজ্জিত হন আপনারা। প্রত্যেকটা দুঃখের ঘটনায় রং চড়ানো স্বভাব হয়ে গেছে আপনাদের’।
বিগ বস প্রতিযোগী রাহুল বৈদ্যর স্ত্রী, তথা অভিনেত্রী দিশা পারমার লেখেন, ‘একজন শোকস্তব্ধ মহিলার মুখের রি-অ্যাকশন নেওয়ার জন্য ক্যামেরা তাক করবার চেয়ে অসংবেদনশীল জিনিস আমি আর দেখেনি! এটা বোঝা কি এতটাই কষ্টকর? অবিশ্বাস্য’।