গায়ক হিসেবে শুধু নয়, অভিনেতা হিসেবেও একাধিকবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন শিলাজিৎ মজুমদার। মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর পরবর্তী সিনেমা ‘অলক্ষ্যে ঋত্বিক’। শিলাজিতকে দর্শক দেখবেন স্বয়ং ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে! কতটা কঠিন ছিল, এমন কিংবদন্তি চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা, কীভাবে শিলাজিৎ থেকে হয়ে উঠলেন ঋত্বিক? ১৪ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা। তার আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে আড্ডায় শিলাজিৎ মজুমদার।
ঋত্বিক ঘটকের চরিত্র মানে তো বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ? রাজি হলেন কীভাবে?
রাজি হওয়ার প্রসেসটা আসলে লম্বা। প্রথম যখন অফার এল, আমি তো শকড। আমাকে কীভাবে বলতে পারে! এর আগে যখন হরনাথ চক্রবর্তী ফোন করেছিল জিতের সঙ্গে কমার্শিয়াল ছবিতে, তখনও আমি অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু এটায় অবাক হওয়ার মাত্রাটা আরও বেশি ছিল। ঋত্বিক ঘটকের চরিত্র কীভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলব, আমার মাথাতেই আসছিল না। এমন না আমাকে দেখতে ঋত্বিক ঘটকের মতো, না আমার অ্যাটাটিউড। এদিকে এটা হৃত্বিক ঘটকেরই বায়োপিক। প্রশ্ন করলাম, কেন আমকে চাইছ? উত্তর এল, না তোমার মধ্যে আমি ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে মিল খুঁজে পাই। লুক আমরা প্রস্থেটিক করে নেব।
তারপর প্রস্থেটিক হল?
প্রথমে প্রেস্থেটিকের প্রায় ৪টে সিটিং দিলাম। তবে ব্যর্থতা এল। ওরা বিভিন্ন মাপটাপ নিয়ে করল। কিন্তু সম্পূর্ণ রেডি হওয়ার পর, আমাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো দানব। অনেক চেষ্টা করেছিল। হয়নি। এটা হতেই পারে, সব চেষ্টা তো সার্থক হয় না। আমার একটাই দাবি ছিল, ‘জানি আমাকে দেখতে কখনোই ঋত্বিক ঘটকের মতো হবে না। তবে আমাকে আমার মতো যেন দেখতে না লাগে’। এরপর প্রস্থেটিকটা যখন ভেস্তে গেল, আমি ওদের বললাম, ‘আমি খেয়াল করেছি আমার কপাল অনেক ছোট, ঋত্বিকবাবুর থেকে’। আমিই ওদের পরামর্শ দিলাম, সামনে থেকে চুল কামিয়ে দিতে। আমি তো টানা এখানেই কাজ করব। আবার চুল গজিয়ে যাবে পড়ে।
আর ঋত্বিক ঘটকের হাবভাব রপ্ত করলেন কীভাবে?
প্রস্থেটিক নিয়ে ওসব যখন চলছিল, তখন আমি ওঁর অ্যাটিটিউডগুলো দেখছিলাম। উনি কীভাবে কথা বলতেন। ওই সময়ের অনেক মানুষ আমি দেখেছি, যাদের একটা অদ্ভুত স্টাইল অফ স্পিকিং ছিল। একটা আলাদা অ্যাকসেন্ট। আমি একজন অ্যাসিস্টেন্ট রেখেছিলাম। যার দায়িত্ব ছিল শট দেওয়ার সময় ভালো করে দেখবে, কোনোভাবে আমাকে শিলাজিৎ না মনে হয়। ওকে বলেছিলাম, তুই আমাকে এসে বলবি কিছু মনে হলেই, শটটা আবার দাও।
অলক্ষ্যে ঋত্বিক-এর ট্রেলার থেকে কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?
ট্রেলারের রেসপন্স ম্যাসিভ। আমি বরং বলছি, ছবি দেখে বলো। ট্রেলারে ওইটুকু দেখে কতটা আর বোঝা যাবে। আসলে লোক আমার ওই অ্যাটিটিউডটার খুব প্রশংসা করেছে। এখন দেখা যাক, কী হয়। ছবি দেখে দর্শক কী বলে।
শুভঙ্কর ভৌমিকের প্রথম কাজ পরিচালক হিসেবে? একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
বাচ্চা ছেলে। ঠান্ডা মাথায় যে এত বড় কাজটা উতরে দিয়েছে! ও নিজে নিজের কাজ নিয়ে খুশি। যেমন ভেবেছিল, যতটা চেয়েছিল, তেমন তুলে এনেছে পর্দায়। এবার দেখা যাক দর্শকের কাছে কতটা সমাদৃত হতে পারে।
ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে নিজের কোনো মিল খুঁজে পেলেন?
একটা মিল পেয়েছি, খুব সামান্য সেটা, কোনো কিছুর সঙ্গে আপোস করতেন না। নিজের যে বিশ্বাস, তাই নিয়েই কাজ করতেন। জনগণ পছন্দ করুক না করুক। এই একটা জায়গায় হয়তো আমার সঙ্গে সামান্য মিল আছে। এটা অবশ্য সব শিল্পীরই থাকে। আমি যেমন, আমার বেসিক অ্যালবাম রিলিজ করেছি আজ থেকে ১৬ বছর আগে। তারপর থেকে অনেকে বলেছে গান রিলিজ কর। আমি করিনি। কে কী বলছে, তা নিয়ে আমি অত ভাবি না। আমি নিজের জীবন নিজের শর্তে বাঁচি। এটা ছাড়া আর কিছু মিল নেই। ওঁর যা শিক্ষা, যেভাবে সিনেমাকে ভেবেছেন, যেভাবে অনবরত কাজ করেছেন, যেভাবে নতুন নতুন জিনিস এনেছেন, তার সঙ্গে আমার কোনোদিক থেকেই কোনো তুলনা হয় না।
অসুখ হোক বা অযোগ্য, আপনার অভিনয় তো বেশ প্রশংসিত! তাও কেন এত কম সিনেমায় কাজ?
(হো হো করে হাসি)… খোঁজো খোঁজো। মিডিওকারে ভর্তি পৃথিবী তো। দর চাইলে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। যে কাজটা করতে আমার থেকে কম টাকায় মানুষ পেয়ে যাবে যখন-তখন, সেটায় আমাকে কেন নেবে? আসলে আমিও মাঝে মাঝে উত্তরটা ভাবি। এমন না, এটা আমার উপরে খুব প্রভাব ফেলে। হতে পারে, পরিচালক-প্রযোজকরা আমাকে নিয়ে ভাবেনই না। শেষ কয়েকটা ছবি যা করেছি, দেখে হয়তো বুঝতে পারবে। জানি না এবার। সঙ্গী যখন করলাম, হরদা বলল ফাটিয়ে দিয়েছিস। তোকে নিয়ে সোলো ছবি করব। তারপর কোথায় হরদা, কাজ হল শুধু বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)-কে নিয়ে। অযোগ্যতে ঋতু (ঋতুপর্ণ ঘোষ) আমাকে বলেছিল যে, আমি কেমন অভিনয় করব তা নিয়ে মনে সন্দেহ ছিল সৌমিত্রদার। সেই তিনিই আমাকে ছবির প্রিমিয়ারে জড়িয়ে ধরে প্রশংসা করেছিলেন। এগুলোই আসলে আমার কাছে সব। আর সত্যি বলতে, গানটাও তো রয়েছে। লাইভ শো, রেকর্ডিং। আর টাকারও ব্যাপার আছে। শো-তে গিয়ে যা পাই, তা তো আমি সিনেমাতে একদিনে পাই না। তবু আমি করি। একটা ঠিকঠাক টাকা পেলেই আমি করি।
একই কথা কি সুরকার শিলাজিতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
এই দু-তিন বছর হল, গান গম্পোজ করার জন্য আমাকে পরিচালকরা ডাকছেন। সামনেই ৩-৪টে সিনেমা রিলিজ করবে, যাতে আমার গান থাকছে। এখন আর নাম নিচ্ছি না। কিছুই তো বলা যায় না, যতক্ষণ না আসছে। কিছুদিন আগে একটা করলাম বহুরূপীর জন্য।
তাহলে অনেকটা সময় লাগল নিজেকে প্রমাণ করতে?
তা তো লাগবেই। ডাক্তারি পাস করার থেকে যেমন কঠিন হল পসার তৈরি করা। তেমনই এটা। কত দারুণ শিল্পী আছে বলো তো আমাদের বাংলায়। প্রতিদিন কাজ করছে তাঁরা। আমার আবার প্রতিদিন কাজ করতে ইচ্ছে করে না। পাচ্ছিলাম না একসময়, এত ভেবে কী হবে। দেখতে দেখতে ২৫টা সিনেমা হয়ে গেছে (অভিনেতা হিসেবে)। আর কী চাই!