প্রচন্ড গরম, তারউপর উপচে পড়া ভিড়। ঘেমে নেয়ে এক্কাকার কেকে। দু থেকে আড়াই হাজার মানুষের বসবার জায়গা রয়েছে নজরুল মঞ্চে, তবে জানা যাচ্ছে মঙ্গলবার কেকে-র কনসার্টে প্রায় ৭০০০ জন অডিটোরিয়ামের ভিতরে ছিল। স্বভবতই বাতানুকূল ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করেনি। উপস্থিত দর্শকদের অনেকে তো অভিযোগ করছেন এসি বন্ধ করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবুও গান থামাননি কমিডেট কেকে। তোয়ালে দিয়ে বারবার ঘাম মুছেছেন, জল খেয়েছেন, ইশারায় স্টেজের পিছনের আলো বন্ধ করতে বলেছে তবু তাঁর সুর থামেনি। শেষ দম পর্যন্ত গান গেয়ে গিয়েছে। অডিয়েন্সের উদ্দেশে শেষ বার্তা, ‘গড ব্লেস ইউ অল’ (ভগবান আপনাদের মঙ্গল করুন)। এরপর ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চর স্টেড ছেড়ে বার হতে দেখা যায় কেকে-কে।
কেকে-র চোখে মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, তাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই ভিডিয়োতে। কিন্তু নিয়তির ইশারা বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেল তাঁর। ম্যানেজার ও বাউন্সাররা যখন নজরুল মঞ্চর ব্যকস্টেজ দিয়ে বার করে নিয়ে যাচ্ছেন কেকে-কে। সেই দমবন্ধ পরিস্থিতির ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন শো অর্গানাইজারদের এই চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা নিয়ে। আরেকটু কি সতর্ক হওয়া যেত না? একজন শিল্পীকে একটু স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেওয়া যেত না পারফর্ম করবার জন্য।
কেকে-র ম্যানেজার জানিয়েছেন গাড়ি উঠে আচমকা শিল্পী বলেন, ‘এসি বন্ধ কর, ঠাণ্ডা লাগছে’। শরীরে ক্রাম্প ধরছে সে কথাও বলেন কেকে। এরপর পৌঁছান ধর্মতলার পাঁচতারা হোটেলে। ওয়েরয় গ্র্যান্ডের লবিতে ছবি শিকারিরা তাঁকে ছেঁকে ধরে। আবদার জানায় সেলফির। কেকে বলেন শরীরটা ভালো লাগছে না, আগামিকাল ছবি তোলবার প্রমিস করেন। কিন্তু সেই কাল আর এল না!
হোটলে রুমের সোফায় বসে বমি করেন শিল্পী, তারপর মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন… সেই সময় তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ম্যানেজার রীতেশ ভাট। এরপর হোটলকর্মীদের সহায়তায় দ্রুত সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কেকে-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন কেকে-র স্ত্রী, জ্যোতিকৃষ্ণ এবং সন্তানেরা। এদিন এসএসকেএম হাসপাতালে অন-ক্যামেরা কেকে-র মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে। এরপর শিল্পীর নিথর দেহ নিয়ে মুম্বই উড়ে যাবেন স্ত্রী ও পুত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় জানিয়েছে প্রয়াত শিল্পীকে বিমানবন্দরে গান স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাবে রাজ্য সরকার।