দীর্ঘ আন্দোলনের অবশেষে ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। যেখানে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ৫ দফা দাবির মধ্যে বেশকিছু মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে রয়েছে সিপির পদত্যাগ, স্বাস্থভবনের অধিকর্তা ডিএমই, ডিএইচএসের পদত্যাগ সহ আরও বেশকিছু দাবি। যদিও কিছু দাবি মানা এখনও হয়নি। সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষ বলে জানানো হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানান জুনিয়র ডাক্তররা। তবে তাঁদের দাবিগুলি মেনে নেওয়া হলেও, সেগুলো যতক্ষণ না ফলপ্রসূ হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে বলে সাফ জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বেশকিছু দাবি মেনে নিয়েছেন জানতে পারার পরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন স্বাস্থ্যভবনের সামনে আনন্দোলনরত কিছু জুনিয়র ডাক্তার। রীতিমতো উল্লাস করে নাচতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের একাংশকে। কাউকে কাউকে 'স্বাস্থ্যভবন সাফাই হল', 'লালবাজার সাফাই হল' এই স্লোগানও তুলতে দেখা যায়। যেঘটনা মোটেও ভালোভাবে নিতে পারছেন না কিছু মানুষ। আন্দোলনকারীদের একাংশের উল্লাসের কড়া সমালোচনা করলেন ভূমির গায়ক, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে সুরজিৎ লেখেন, ‘সবাইকে দোষ দিচ্ছি না। তবে অন্তত এই কিছুজন একেবারেই ভুলে গিয়েছেন যে এই প্রতিবাদ কোথা থেকে শুরু হয়েছিল... এটা একটা নৃশংস ধর্ষণ ও খুন...।’
যদিও গায়ক সুরজিৎ-এর এহেন মন্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারেননি, ডক্টর মৌমিতা মাইতি নামে এক চিকিৎসক। তিনি পাল্টা সুরজিৎকে তোপ দেখে লেখেন, ‘আমি আপনার পেজে বিগত বেশকিছুদিনের পোস্ট দেখলাম। কোথাও দেখলাম না যে আপনি এধরনের জঘন্য অপরাধের নিন্দা করে কিছু পোস্ট করেছেন। তবে এই ছাত্রছাত্রীরা সেখানে দীর্ঘদিন বিচারের দাবিতে ছিল। তাঁদের এই এই আন্দোলন শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের জন্য নয়, আমরা এমন বিবৃতিও দিয়েছি যে এমনটা আর হতে দেব না।’
ডঃ মৌমিতা মাইতির এমন মন্তব্যের উত্তরে গায়ক সুরজিৎ পাল্টা লেখেন, ‘আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত ডঃ মাইতি... আমি এই কারণেই বলছি, এটা সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে.. যাঁরা এই প্রতিবাদের অংশও ছিল, তাঁরা হলেন কিছু আন্তরিক এবং সচেকম জুনিয়র ডাক্তার... এটা ন্যায়বিচার পাওয়ার সবেমাত্র শুরু তবে এর উদযাপন হয় না।’
কেউ আবার সুরজিতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে লিখেছেন, ‘ঠিক কথাই! কীসের উদযাপন? শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের অপসারণ বা বদলি করে সত্যিই অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধান হবে?’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘ঠিকই স্যার, এরাঁ এই আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ঠ করছে। নির্যাতিতার জন্য প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, তাঁর পরিবার কী পেল? এখানে রাজনীতি জিতেছে, মর্যাদা হেরে গেছে।’ এমনই পক্ষে বিপক্ষে নানান মতা উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত কিছুক্ষণ আগেই জানা গিয়েছে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো হয়েছে বিনীত গোয়েলকে। নতুন পুলিশ কমিশনার হচ্ছেন মনোজ বর্মা। এতদিন এডিজি আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। বিনীত গোয়েলকে পাঠানো হল এসটিএফের এডিজি এবং আইজিপি পদে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন থেকে বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রভাবিত করার অভিযোগে সরব ছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা