তাঁর কপালের গোল টিপে লেখা থাকে ‘ক’। শহর কলকাতার সঙ্গে নাড়়ির টান নেই, তবে মনেপ্রাণে তিনি কলকাতাকে ভালোবেসেছেন। কথা হচ্ছে ঊষা উত্থুপের। আরজি করের চিকিৎসক তরুণীর নৃশংস খুন ও ধর্ষণের মামলা নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁকেও। তাই দেশের প্রধান বিচারপতির মুখোমুখি হয়ে সহজ সরল মনে বেশকিছু প্রশ্ন করে বসলেন ঊষা উত্থুপ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের জয়েন্ট বেঞ্চে বসেছিল আরজি কর মামলার শুনানি। এই শুনানি শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই সোমবার রাতে নারীশক্তি সংক্রান্ত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির মুখোমুখি হন ঊষা উত্থুপ। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি গায়িকা। তিনি সরাসরি জিগ্গেস করেন, ‘আপনি কোর্টে কেন নেই? এই অনুষ্ঠানে কী করছেন? আপনি কবে কলকাতার খুন ও ধর্ষণের মামলা নিয়ে রায় দেবেন?’ প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি প্রধান বিচারপতি। ধৈর্য্য ধরে বর্ষীয়ান গায়িকাকে জবাব দেন তিনি। জানিয়েছেন সাংবাদিক চন্দ্র আর শ্রীকান্ত।
ওই অনুষ্ঠানেরই অপর এক ভিডিয়োতে দেখা যায় চেয়ারে বসে গান গাইছেন ঊষা উত্থুপ। পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং তাঁর সহধর্মিণী। খানিক গেয়ে প্রধান বিচারপতিতেও গাইতে জোর করেন ঊষা উত্থুপ। আবদার ফেলেননি প্রধান বিচারপতি। সেই ভিডিয়োতে হালকা ছলে পাওয়া গেল দুজনকে। হাসি-ঠাট্টা ভাগ করে নিলেন পরস্পরের সঙ্গে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন টলিপাড়ার শিল্পী, পিছিয়ে থাকেননি ঊষা উত্থুপও। এই ঘটনার পর প্রতিবাদে ‘জাগো রে’ শীর্ষক একটি গানও গেয়েছেন শিল্পী।
গত ৯ই অগস্ট ভোর রাতে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক চিকিৎসক তরুণী ধর্ষিতা হন এবং তাঁকে খুন করা হয়। পরদিন সকালে তাঁর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বারে বারে উঠেছে প্রশ্ন। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে এই মামলার দায়িত্বভার আপতত সিবিআইয়ের হাতে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়। এই মামলার মূল অভিযুক্ত সে। গত শনিবার সিবিআই নির্যাতিতা তরুণীর খুন ও ধর্ষণের মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেন আরজি করের তৎকালীন সুপার সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে।
চিকিৎসক তরুণীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে টানা ৩৮ দিন ধরে কর্মবিরতিতে রয়েছে জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকেরও পরেও এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাঁরা। দিদি আশ্বাসে উঠবে না আন্দোলন, উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তবেই উঠবে কর্মবিরতি।
মঙ্গলবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে নির্যাতিতার বাবা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা প্রকৃত। তিনি যে চিঠি দিয়েছেন, সেটা আমরা সামনে আনব না। কারণ সেটা গোপনীয়।' পাশাপাশি সিবিআইয়ের স্টেটাস রিপোর্ট ‘ডিস্টার্বিং’ এ কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।