আরজি করের ধর্ষণ-খুন, কুলতুলির নাবালিকার ধর্ষণ-খুনের মাঝেই এই বছরের দুর্গাপুজো। কিছু মানুষ উৎসবে ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নেভেনি। এর মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠল 'সিংহি পার্কের পুজো বয়কট'-এর ডাক। নেপথ্য চতুর্থীর রাতে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা যায়, সেই ক্লাবের এক হোতা এক গরীব মধ্যবয়স্ক ফুচকওয়ালার স্টল লাথি মেরে ভেঙে দিয়েছেন। এরপর চলছে শাসানি।
সেই ঘটনার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। এক যুবতী ভিডিয়ো করছে দেখেই উলটো দিকে মুখ করে হাঁটা লাগান ক্লাবের কর্মকর্তারা। আগুন গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ক্লাবকর্তাদের এক গরীব মানুষের সঙ্গে করা এই অমানবিক আচরণ।
‘কলকাতার দুর্গা পুজোর সাথে বহু সাধারণ এবং অসাধারণ মানুষের রুটিরুজির যোগ .... তাই উৎসব না করলেও আসুন দুর্গাপুজোয় যোগ দিই’, এমন কথা ফলাও করে প্রচার করেছে যেই ক্লাব বাস্তবে তাঁরা আসুরিক উল্লাসে মেতেছে এক গরীব ফুচকাওয়ালার রুজিরুটি ছিনিয়ে নিতে! এই মর্মান্তিক দৃশ্য় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানান অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তী, অভিনেত্রী অনুরাধা মুখোপাধ্যায়রা।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টনক নড়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের। নিজেদের ভ্যারিফায়েড ইনস্টাগ্রাম পেজে ক্ষমা চেয়ে নেন তাঁরা। সাফাই স্বরূপ বলা হয়, ওই ফুচকাওয়ালাকে নাকি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি আরও বলা হয় অভিযুক্ত ক্লাবকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পোস্টে লেখা হয়- ‘গতকাল রাত্রে (সোমবার) আমাদের পূজা মণ্ডপের কাছে একটি অনঅভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যা আমাদের পুজো কমিটি কখনই সমর্থন করে না। উপরোক্ত ঘটনায় যে ব্যক্তি দায়ী ছিলেন তার বিরুদ্ধে আমাদের পুজো কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেও (ফুচকাওয়ালা) যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস রাখি আমাদের তরফ থেকে ভবিষ্যতে এই ধরণের কোনও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না’।
যদিও এই দায়সারা ক্ষমাপ্রার্থনায় মন গলেনি নেটপাড়ার। বরং কেউ বলছেন, ‘লাথিটা তো প্রকাশ্যে মারা হয়েছিল স্টলে, তাহলে ওই ক্লাবের হোতাকে বলুন সবার সামনে ফুচকাওয়ালার থেকে ক্ষমা চাইতে’। আরেকজন বলেন, ‘গরীবদের পেটে লাথি মেরে আবার ঘটা করে দুর্গা পুজো করছেন’। অপর একজন লেখেন,'কী প্রমান আছে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন? আর এটারই বা কি প্রমান আছে যে লোকটি এই কাজটা করেছে তার যথাযথ শাস্তি হয়েছে? বিশ্বাস নেই বড়োলোকদের'। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে শহর জুড়ে। তার মাঝে কলকাতার নামী ক্লাবের কর্তার এমন অমানবিক আচরণ সহজে ভুলছে না মানুষ, তা স্পষ্ট।