নদিয়ার মাজদিয়ার পাপিয়া করকে কে না চেনে! গত ১৫ বছর ধরে অভুক্তদের মুখে অন্ন তুলে দেন রানাঘাটের ‘অন্নপূর্ণা’। স্টেশনে থাকা দুঃস্থ-ভিখারিদের দেখলে যেখানে মানুষ পাশ কাটিয়ে চলে যান, সেখানে তাঁদের মুখে নিজের হাতে অন্ন তুলে দেন পাপিয়া। করোনাকালে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। বিশেষত ভিখারি গোবিন্দ-র সঙ্গে তাঁর স্নেহের সম্পর্ক মন কেড়েছিল নেটিজেনদের। আরও পড়ুন-'আমি নাকি ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি….আমার ভাষাকে ছোট করার অধিকার কেউ দেয়নি', ফের বোমা ফাটালেন ইমন
লাইমলাইট থেকে দূরে থেকেও গত দু-বছর ধরে একইরকমভাবে পাতানো ভাই গোবিন্দর যত্ন নিয়ে চলেছিলেন পাপিয়া। কিন্তু শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃসংবাদ ভাগ করে নেন তিনি। জানান, আচমকাই মৃত্যু হয়েছে গোবিন্দর। সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় কাতর সমাজসেবী পাপিয়া। তাঁর সেই শোকে সমব্যাথী অভিনেত্রী শ্রুতি দাস। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শ্রুতি লেখেন, ‘একটা পবিত্র অধ্যায় এর সমাপ্তি। পরজন্মে পাপিয়াদির কাছেই ফিরে এসো গোবিন্দদা’।
কীভাবে মৃত্যু হল গোবিন্দর? শোকসন্তপ্ত পাপিয়া জানিয়েছেন, ‘গত ২৭ তারিখ আমার সাথে গোবিন্দর শেষবারের মতো দেখা হয়। আমার কাছে, বড়ি দিয়ে কাতলামাছের ঝোল খেতে চেয়েছিল, আমি রান্না করে নিয়ে যায়, আমার জন্য কোন মেলা থেকে একটা ব্যাগ এনে বললো এটা নিয়ে সব জায়গায় যাবি, নিজের জন্য তো আর ভালো কিছু কিনবি না। সেদিন কত হাসাহাসি করলাম, মজা করলাম। পিনাকী ভদ্র আমাদের ছবি তুললেন। জানি না কেন সেদিন আমায় কিছুতেই আসতে দিচ্ছিল না, আর একটু থাক, আর একটু থাক বলে আমার পা দুটো জড়িয়ে বায়না করছিলো বাচ্চাদের মতো। আমায় সরাইঘরে যেতে হবে বলে আমি বললাম, ভাই রে আমায় সরাইঘরে যেতে হবে ওরা আশায় বসে আছে,আমার মেলা শুরু হবে ৩০ তারিখ আমি কটাদিন ব্যাস্ত থাকবো তোর কাছে আসতে পারব না, আমি শেষ হলেই একদিন সারাদিন তোর কাছে থাকবো। তখন যদি জানতাম তুই পালিয়ে যাবি আমি তোকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখতাম রে। সেইসময় সামান্য ঠান্ডা লেগেছিল ওর। আমায় তাও বললো আমি কৃষ্ণনগর তোর সাথে দেখা করে আসবো। অতদিনে তোকে না দেখে থাকতে পারব না। পরশু ফোন করে বললো জ্বর এসেছে একটু৷ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ওর পাশে যে বাড়ির মাসিমারা ওকে রান্না করে দেয় রাতে ওই বাড়ির ভাইটা বললো, দিদি আমরা ডাক্তার দেখাচ্ছি তুমি চিন্তা করো না। কাল শুললাম ডাক্তার কিছু রির্পোট করতে দিয়েছে তার সাথে গ্যাস দিয়েছে। কালই যাবতীয় রিপোর্ট করা হয়,আজ তা আসার কথা ছিলো। আজ ভোরে মাসিমারা আমায় জানায় রাতে ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল,ওরা হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য রেডি হচ্ছে তার মধ্যেই কাউকে সময় না দিয়েই চলে গেলো। জীবন কতটা অনিশ্চিত সকলের। আমার জন্য অপেক্ষা না করেই স্বার্থপরের মতো ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো’।
তিনি আরও লেখন, 'আমাকে আর গোবিন্দ কে নিয়ে অনেকের অনেক সমস্যা ছিলো, রাগ ছিলো, আমাদের নিয়ে সমালোচনা ছিলো, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমরা ভাই- বোন আর কখনও ছবি,ভিডিও দিয়ে আপনাদের বিরক্তির কারণ হব না। আশাকরি আপনারা এবার শান্ত এবং তৃপ্ত হবেন। আমিও পিছুটান মুক্ত হলাম। আমার শরীর খারাপ হলে ভাবতাম আমার কিছু হলে ওর কি হবে? মরতেও ভয় পেতাম। আর আজ নিজে হাতে মালা, চন্দনে সাজিয়ে ওকে বিদায় দিলাম।
আর স্বাভাবিক ভাবে কাজে ফিরতে পারবো কিনা জানি না। আমার জীবনের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। তবে এইটুকু বলতে পারি গোবিন্দ ছাড়া আমার বেঁচে থাকা কতটা সম্ভব আমি জানি না। তাও চেষ্টা করবো। একজন মা সন্তান হারালে সে আর আগের জায়গায় ফিরতে পারে কিনা জানি না। আমি ওকে ভাই বললেও ও আমার সন্তান ছিলো। আপনারা আর্শীবাদ করবেন ও সেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। পরের জন্মে যেন আমার কাছে ই ফিরে আসে যে কোন রূপে'।