৮ ডিসেম্বর ৮০ বছরে পদার্পণ করলেন শর্মিলা ঠাকুর। তিনি হলেন একজন বাঙালি অভিনেত্রী তথা নবাব পত্নী। সত্যজিৎ থেকে শুরু করে উত্তম কুমার, সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি। তিন সন্তানের মাও হয়েছেন। অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন প্রচুর। কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেছেন এমন কিছু কথা, যা হয়ত আপনারও কাজে লাগবে।
শাশুড়ি প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: ভোপালের বেগম সাজিদা সুলতান ছিলেন শর্মিলা ঠাকুরের শাশুড়ি। শাশুড়ি প্রসঙ্গে অভিযাত্রী বলেছিলেন, প্রথমবার শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমি ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। উনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ওঁর ছেলে সম্পর্কে আমি কি ভাবি? উত্তরে আমি বলেছিলাম, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি। এই কথা শুনে উনি হেসেছিলেন।উনি জানতেন, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ধর্ম পরিবর্তন প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: মুসলিম রীতি অনুযায়ী শর্মিলা ঠাকুরের নাম পরিবর্তিত করা হয়। ধর্ম পরিবর্তন প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেছিলেন, এটা যেমন খুব একটা সহজ ছিল না তেমন খুব একটা কঠিনও ছিল। আমি কখনওই গোঁড়া হিন্দু ছিলাম না। কিন্তু এখন আমি হিন্দু এবং মুসলিম, দুটি ধর্মকেই ভীষণ ভালো করে বুঝি। মনসুরের পছন্দসই নাম ছিল আয়েশা, সেটাও আমি গ্রহণ করেছিলাম।
আরও পড়ুন: ৮০-তে শর্মিলা! একফ্রেমে পতৌদির নবাব পরিবার, ঠাকুমার জন্মদিনে দুষ্টুমিতে মাতল জেহ-ইনায়া
আরও পড়ুন: পরীক্ষার আগে নুসরতের আশীর্বাদ চাইল পড়ুয়া! খুদে ভক্তের অনুরোধে কী কাণ্ড ঘটালেন অভিনেত্রী?
নিকাহনামা প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেছিলেন, আমাদের বিয়ের সময় যা চুক্তি হয়েছিল তা শুনলে সকলে হাসবে। ক্রিকেট আলোচনায় আমি যেন কখনও অংশগ্রহণ না করি, সেটাই বলা হয়েছিল নিকাহনামায়। আমি এটা স্বীকার করি যে ক্রিকেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান কোনওদিনই ছিল না। অন্যদিকে উনিও আমার কাজ নিয়ে খুব একটা কথা বলতেন না।
বর্তমান প্রজন্মের নায়ক নায়িকাদের প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: আমার শুধু মনে হয় পরিচালক যা বলছেন সে কথা শোনা উচিত। আমার মনে আছে উমা চরিত্রে অভিনয় করার সময় পরিচালক ঋষিদা আমায় বলেছিলেন চুল বেঁধে না রাখতে কিন্তু ওঁর কথা শুনিনি আমি। সিনেমাটির জন্য প্রশংসিত হয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু পরে মনে হয়েছিল পরিচালকের কথা আমার শোনা উচিত ছিল। যেহেতু একটি সিনেমা পরিচালকই তৈরি করেন, তাই তিনি জানেন চরিত্রের জন্য ঠিক কোনটা প্রযোজ্য।
সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: মাত্র ১৪ বছর বয়সেই আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে এসেছিলেন মানিকদা। ওঁর সমস্ত কথা শুনে চলতাম আমি। আমি ভীষণ ভালো শ্রোতা ছিলাম। ভুল হলে তিনি শুধরে দিতেন তাই নার্ভাস থাকতাম না কখনও। উনি শিখিয়েছিলেন দুর্দান্ত সিনেমা তৈরি করার জন্য কোনও বাজেটের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন শুধু প্রতিভা এবং কল্পনাশক্তি।
সৌমিত্র প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: সৌমিত্রদার সম্পর্কে আলাদা করে বলার কিছু নেই। আমার ৭৫ বছর জন্মদিনে আমার এক বন্ধু একেটি ফিল্ম তৈরি করেছিলেন যেখানে সৌমিত্রদার সঙ্গে আমার কথা বলান হয়েছিল। উনি তখন ভীষণ অসুস্থ ছিলেন কিন্তু তাও ১৫ মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: নিন্দকদের মুখে ছাই! বিয়েবাড়িতে অভিষেকের বাহুলগ্না ঐশ্বর্য, হাজির হৃতিক-সাবাও
আরও পড়ুন: 'ও আমার সন্তান ছিল..', ভিখারি গোবিন্দর মৃত্যুতে শোকে কাতর পাপিয়া, সমব্য়াথী শ্রুতি
উত্তম কুমার প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর: উত্তম কুমার ভীষণ স্নেহশীল ছিলেন। ক্যামেরার বাইরে তিনি ভীষণ রসিক মানুষ ছিলেন। শুটিং না থাকলে আমরা একসঙ্গে গল্প করতাম। নাচ গানের আসর বসত। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে উত্তম বাবু যখন কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী পরিচালনা করলেন তখন বুঝলাম উনি ঠিক কতটা প্রতিভাবান।
সইফ আলি খান সম্পর্কে শর্মিলা ঠাকুর: বাবার মতো একদমই চুপচাপ থাকত না ও। বলা ভালো, স্বামীর একেবারে বিপরীত ছিল ও। কোনও কথা শুনত না। ওকে আটকে রাখতে হিমশিম খেতে হত। ৬ বছর পর্যন্ত ওকে আমি স্কুল নিয়ে যেতে পারিনি। ছোটবেলায় একপ্রকার আমাদের অতিষ্ঠ করে রাখত। কোনও নিয়ম মানত না, কোনও কথা শুনত না। ওকে নিয়েই আমার সারাক্ষণ কেটে যেত।