হেমা কমিটির রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকে উত্তাল দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যৌন হেনস্থার ঘটনা উঠে এসেছে হেমা কমিটির রিপোর্টে। তারপর থেকেই বলিউড-সহ দেশের অন্য সকল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও নড়েচড়ে বসেছে।
এবার প্রাক্তন বলিউড অভিনেত্রী তথা সলমন খানের প্রাক্তন প্রেমিকা সোমি আলি বলিউডের অন্ধকারময় দিক নিয়ে মুখ খুললেন। নব্বইয়ের দশকে অভিনয় কেরিয়ারে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন সোমি, সেই নিয়ে মন খুলে কথা বলেছেন।
কেন বলিউডকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে দেশ ছাড়েন সোমি? তাঁর কথায়, ‘হেমা কমিটির রিপোর্টের ফলাফল একই সঙ্গে হতাশাজনক এবং দুর্ভাগ্যবশত, শুধু কেরল নয়, সারা বিশ্বের বিনোদন জগতের মহিলাদের কাছেই এটি খুব পরিচিত। যদিও ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে বলিউডে আমার অভিজ্ঞতা মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মহিলাদের মুখোমুখি হওয়া পরিস্থিতির সাথে হুবহু মিল ছিল না, তবে একটি বিষাক্ত পরিবেশ তো ছিল। মেয়েদের মন খুলে কথা বলার অধিকার ছিল না।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন #MeToo ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি যেখানে আমাকে সতর্ক করা হয়েছিল যে আমি যদি আমার কেয়িরার এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তবে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গ আমায় দিতে হবে।’ সোমি আরও জানান, সকলের সামনে সংসারি সুপারস্টার হিসাবে নিজেদের তুলে ধরা অনেক নায়কের হোটেল রুম থেকে বহু মেয়েকে খুব ভোরে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। তবে কারুর নাম নেননি সোমি।
যদিও আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এলজিবিটিকিউ + ব্যক্তিদের অধিকারকে পুরোপুরি সমর্থন করি, আমি বন্ধ দরজার পিছনে বিদ্যমান জটিল এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতি সম্পর্কেও সচেতন। উদাহরণস্বরূপ, বলিউডের অন্যতম বড় তারকা লিঙ্গ-বিভ্রান্ত সম্পর্কে জড়িত হয়েছেন, যেখানে তার সমকামী প্রেমিক তারকার বড় বোনের সাথে একটি গর্ভপাত ভ্রূণের জন্ম দিয়েছেন। এই লুকানো বাস্তবতা পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আরও তুলে ধরে।
সোমির আশা, হেমা কমিটির প্রতিবেদনটি সামনে আসার পর দেশের বিনোদন জগতে মেয়েদের দুর্দশার ছবিটা খানিক হলেও বদলাবে। বর্তমানে একটি এনজিও চালান সোমি। যা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার মেয়েদের পুর্নবাসনের কাজ করে।
সোমি অভিযোগ করেছিলেন তাঁর ফাউন্ডেশনের একটি ডকুমেন্ট্রি সলমন খানের জন্য এই দেশে ব্যান করা হয়েছে। অথচ অতীতে সোমিকে একথাও বলতে শোনা গিয়েছে সলমন তাঁর সংস্থাকে অর্থ-সাহায্য করেছে। সলমনের সঙ্গে তাঁর জটিল সম্পর্ক নিয়ে সোমি বলেন, ‘আমি এবং সলমন একটি জটিল ইতিহাস ভাগ করি, যার মধ্যে সমর্থন এবং উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ উভয়ই রয়েছে। এটা সত্য যে অতীতে সলমন আমার দাতব্য কাজে অবদান রেখেছেন এবং এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে, তার সমর্থন সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না, বিশেষত যখন আমার কাজের আরও কঠিন দিকগুলি আসে যা গার্হস্থ্য হিংসার মতো বিষয়গুলিতে আলোকপাত করে’।
সলমনের বিরুদ্ধে তাঁর ডকুমেন্ট্রি ব্যানের অভিযোগ তুলে এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন সোমি। তিনি বলেছেন, ‘ভারতে আমার শো ব্যান করে দেওয়া। তারপর আমাকে আইনি চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া। পাঠাও তোমার আইনজীবীকে। আমার কাছেও ৫০জন আইনজীবী রয়েছেন, যাঁরা আমাকে বাঁচাবে ওই সব সিগারেটের ছ্যাঁকা, শারীরিক নির্যাতন এবং সেডামি (বিকৃত যৌনাচার, মূলত পায়ুপথে যৌনচার) থেকে যার মধ্যে দিয়ে তুমি আমাকে যেতে বাধ্য করেছো। তাই যাও নিজেকে আয়নায় দেখো… একটা নারী-বিদ্বেষী শূয়োর কোথাকার। আর সেই সব অভিনেত্রীদের লজ্জা পাওয়া উচিত যাঁরা তোমাকে সমর্থন করেছে, একটা মানুষকে যে মেয়ে পেটায়। সেইসব অভিনেতারাও লজ্জা পাক, যারা তোমার সাপোর্টার’।
প্রসঙ্গত ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ অবধি সম্পর্কে ছিলেন সলমন আর সোমি। ম্যায়নে পেয়ার কিয়া দেখেই সলমনের প্রেমে পড়েছিলেন সলমন। এরপর পাকিস্তান থেকে ভারতে ‘পালিয়ে’ আসেন তিনি। সলমনের ঘনিষ্ঠতা পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি তাঁর। তখন যদিও অন্য সম্পর্কে ছিলেন সলমন, তাই সোমির প্রেম প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন। তবে সুন্দরী সোমির সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে সময় নষ্ট করেননি অভিনেতা। সলমনের সঙ্গে প্রেম ভাঙার পর বলিউড ছাড়েন এই পাক সুন্দরী। সম্পর্ক ভাঙার জন্য ঐশ্বর্য রাইকে দায়ী করেছিলেন সোমি। সাত বছরের ফিল্মি কেরিয়ারে ‘কৃষণ অবতার’, ‘অন্ত’, ‘আও প্যায়ার করে’, ‘আন্দোলন’, ‘তিসরা কৌন’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন সোমি আলি। আপতত মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা অভিনেত্রী।