৯০-এর দশকের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সোনালি বেন্দ্রে। যদিও বর্তমানে তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না সিনেমার পর্দায়। মাঝে শোনা গিয়েছিল অভিনেত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত, এবার টামস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নায়িকা তাঁর সেই কঠিন সময়ের নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
ক্যানসার ধরা পড়ার খবর পেয়ে আর পাঁচজনের মতোই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময় যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সোনালি বলেন, ‘প্রথমে আমি কিছুদিনের জন্য অসুস্থ বোধ করছিলাম, তারপর চেকআপ করাতে গেলে চিকিৎসক কয়েকটা পরীক্ষা করার কথা জানান। তারপর জানতে পারি এই রোগ আমার শরীরে বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসকের মুখে প্রথম ‘ক্যানসার’ শব্দটা শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তারপর আমার স্বামী দুই দিনের মধ্যে, আমাকে মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং (MSK) এ নিয়ে গিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: গাব্বার মাঠে সারা! শুভমনের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে কি সিলমোহর দিলেন সচিন-কন্যা?
তিনি আরও বলেন, ‘বার বার মনে হচ্ছিল আমার সঙ্গে এটা কীভাবে ঘটতে পারে? আমি সব সময় একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে এসেছি। পুষ্টিকর খাবার খেয়েছি, ব্যায়াম করেছি তারপরও কীভাবে হয়? কিন্তু আমি শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলাম যে এটা নিয়ে এত ভাবা ঠিক হচ্ছে না। পরিবর্তে, আমি কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারি সেই দিকে আমার মনোনিবেশ করা উচিত। আমার এই কঠিন সময়ে আমার পাশে প্রিয়জনদের পেয়েছিলাম এর জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। এই ভাবানাটাই আমাকে সেই সময় সাহস যুগিয়ে ছিল।'
নায়িকার মতে ক্যানসারকে হারাতে গেলে আগে তাকে বুঝতে হবে। তাঁর কথায়, ‘যে মুহূর্ত থেকে আমি 'ক্যানসার' শব্দটা শুনেছিলাম, আমি জানতাম যে আমি কী নিয়ে কাজ করছি তা আমাকে পুরোপুরি বুঝতে হবে। আমি শুধু বসে থাকতে চাইনি, যা কিছু এরপর আমার সঙ্গে হবে তা ঘটতে দিতে চাইনি। আমি আমার রোগ নির্ণয়, কীভাবে চিকিৎসা হবে সে সম্পর্কে যতটা সম্ভব নিজে জেনে বুঝে নিতে চেয়েছিলাম।'
আরও পড়ুন: 'এটা বেঁচে থাকার সময়', অভিনয় ছাড়ার কারণ নিয়ে এবার মুখ খুললেন বিক্রান্ত!
বাড়ির লোকের পাশাপাশি অভিনেত্রী নিজেও তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিজেকে সব সময় মানসিক ভাবেও সুস্থ রাখতে চেষ্টা করতেন। তাঁর মতে, ‘আমি বিশ্বাস করি ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক ভাবে সুস্থ থাকারও প্রয়োজন রয়েছে। মানসিকভাবে শক্তিশালী হলে এবং একটি ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখলেই আমার মতে অর্ধেক যুদ্ধ জিতে যাওয়া যায়।’
কিন্তু এই সব কিছুর পরও অভিনেত্রী কাছে সবচেয়ে কঠিন ছিল তাঁর ছেলেকে তাঁর রোগের বিষয়ে জানানো। এই প্রসঙ্গে সোনালি বলেন, ‘রণবীর সুইজারল্যান্ডে একটি স্কুল ট্রিপে ছিল, যখন আমি আমার রোগ সমন্ধে জানতে পেয়েছিলাম। সে সময় ওর বয়স ছিল ১৩। তখন ওকে মিথ্যে বলার পরিবর্তে, আমি এবং আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ওকে সম্পূর্ণ সত্য বলাই ভালো। আমরা সবসময় ওকে যা সত্যি তাই বলে এসেছি। আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে রণবীর যেন এই খবরটা আমাদের থেকেই পায়, অন্য কারুর কাছ থেকে নয়।’
সোনালির মতে, ‘তবে ওকে আমার রোগের ব্যাপারে বলাটা সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমি ওকে সত্যি কথা যেমন বলেছিলাম কঠোর হয়ে, তেমনই ওকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে ওর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার এই চিকিৎসায় রণবীর আমাকে অনেক শক্তি জুগিয়েছিল। ও যে আমার পাশে এইভাবে থাকবে তা আমি সত্যি আশা করিনি।’