অভিনেতা সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর পর থেকেই যাবতীয় অভিযোগের আঙুল উঠেছে রিয়া চক্রবর্তীর দিকে । এই নিয়ে চলতে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং এবং ক্রমাগত মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে বলিউডের একটা অংশ সম্প্রতি দাঁড়িয়েছেন রিয়ার পাশে । অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই রিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত বেড়ে চলা সামাজিক নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন একাধিক বিদ্বজন । বলিউডের একাধিক তারকার সাথেই একাধিক উদারনৈতিক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এবার খোলা চিঠি লিখলেন মিডিয়ার উদ্দেশে। ফেমিনিস্ট ভয়েস নামক একটি ব্লগের সৌজন্যে পাবলিশ হওয়া ওই চিঠিতে বলি তারকা গৌরী শিন্ডে , জোয়া আখতার , অভিনেত্রী সোনম কাপুর , অনুরাগ কশ্যপ সহ প্রায় আড়াই হাজার মানুষের সমর্থন লিপিবদ্ধ হয়েছে ।
' হান্ট নিউজ নট উইমেন ' ( সংবাদের খোঁজ করুন, ডাইনি খোঁজা বন্ধ করুন) শীর্ষক ওই চিঠিতে প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে মানসিক অবসাদজনিত সমস্যার গুরুত্ব বিশ্লেষণ না করে যেভাবে মিডিয়ার দৌলতে বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে বর্বর মধ্যযুগীয় পদ্ধতিতে আক্রমণ করে যাওয়া হচ্ছে তার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে | মিডিয়ার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে , যেভাবে নারীর কোনটা করণীয় এবং কোনটা নয় , তার বিচ বিচার বিশ্লেষণের দায়িত্ব তাঁরা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন , তা আদপে সমগ্র নারী জাতিকেই ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে |
গত ১৪ই জুন সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই পরিবার এবং অনুরাগীমহলের যাবতীয় আক্রোশ গিয়ে পরে বান্ধবী রিয়ার ওপর । তদন্ত জারি থাকলেও তাঁকেই সুশান্তের খুনি বলে দাবি করতে থাকেন তাঁরা । এদিকে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত চলতে থাকে মিডিয়া ট্রায়াল । কদিন আগেই এন সি বি দপ্তরে হাজিরা দিতে গিয়ে রীতিমতো মিডিয়া আধিকারিকদের হাতে মবডও হতে হয়েছিল তাঁকে । যদিও বর্তমানে মাদক চক্রে যুক্ত থাকার অপরাধে এন সি বি আধিকারিকদের হাতে গ্রেফতার হয়ে বাইকুল্লা জেলে বন্দি আছেন রিয়া । তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে গিয়েছে । আবার অভিনেতাকে বাতিল ওষুধ সমন্বিত প্রেক্রিপশনের ছবি পাঠিয়ে সেই ওষুধ খেতে বাধ্য করার অভিযোগে তাঁর দুই দিদির বিরুদ্ধেও এফ এই আর দায়ের করেছেন রিয়া ।
চিঠির প্রতি ছত্রে ছত্রে মিডিয়ার বিরুদ্ধে পুরুষতন্ত্রের তাবেদারী করার অভিযোগ এসেছে । বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে আজকে সঞ্জয় দত্ত বা সলমন খান যখন একাধিক মারাত্মক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন , তখন তাঁদের বিরুদ্ধে কি একই ভাবে আদা জল খেয়ে মিডিয়াকে নামতে দেখা গিয়েছে ? ' আজ তাঁদের ক্ষেত্রে পরিবার ভক্তকুল , ব্যক্তিগত ইমেজ নিয়ে বরাবরই সচেতন থেকেছেন আপনারা । আর আজ যখনই একজন নারী নিজের স্বাধীনতাকে মেলে ধরতে চাইলেন , সাথে সাথে অপরাধী সাব্যস্ত না করেই তাঁকে খুনি প্রমাণিত করা হলো এবং তাঁর গ্রেফতারিকে প্রচার করা হলো নিজেদের জয়োল্লাসের আঙ্গিকে । এই জয় নিছকই নারী স্বাধীনতার ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতন্ত্রের স্বার্থকেই সূচিত করে ।
রিয়ার স্বাস্থ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিষ্কার চিঠিতে জানানো হয় ,' সাংবাদিকতার নীতি শাস্ত্র বিসর্জন দিয়ে , কেন্দ্রের বেটি বাঁচাওয়ের বিজ্ঞাপনকে পরিহাসে রূপান্তরিত করে , দেশের যাবতীয় সমস্যাকে দূরে সরিয়ে একটাই লক্ষ্যে নেমেছে মিডিয়া , তা হলো রিয়ার জীবন ধ্বংস করতে হবে । প্রয়োজনে পছন্দ মতো বয়ান লিখে প্রচার করে , তাঁকে মবড করে , শালীনতা শিকেয় তুলে , ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে ছুঁড়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলতেও আপাতত মিডিয়ার বিশেষ আপত্তি নেই । কারণ রিয়া একজন নারী , তিনি বিবাহ না করেই তাঁর বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকতেন , সুশান্তের মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান হওয়ার পরেও তা প্রকাশ না করে নতুন ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন , নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে আত্মরক্ষার স্বার্থে খণ্ডন করতে চেয়েছিলেন ' ।