চল্লিশ দিনের লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে পরাজিত 'অপরাজিত অপু'। আজ দুপুর ১২.১৫ মিনিটে প্রয়াত হন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে না-ফেরার দেশে কিংবদন্তি অভিনেতা। প্রিয় অভিনেতাকে হারিয়ে স্বভাবতই কান্নায় ভেঙে পড়েছে বাঙালি। আলোর উত্সবের মাঝেই একরাশ অন্ধকার জমাট বেঁধেছে মনে। ২০২০ সালে মৃত্যু মিছিলে আরও একটা নাম জুড়ে গেল। সত্যি ২০২০ যেন যাওয়ার আগে প্রিয় মানুষগুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে…
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এই লডাইয়ে শুরু থেকেই পাশে ছিলেন তাঁর কন্যা পৌলমী বসু। এদিন বাবাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তিনিও। তবে এই নাট্যকর্মী আশ্বস্ত করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গুণমুগ্ধ ভক্তদের। পাশাপাশি বেলেভিউ হাসপাতালের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই কঠিন সময়ে রাজ্য সরকার পাশে থাকার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানান পৌলমী। অভিভাবক হয়ে দিদি যেভাবে পাশে থেকেছেন তাতে কৃতজ্ঞ সৌমিত্র কন্যা। পাশাপাশি চিকিত্সক অরিন্দম কর সহ বেলেভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও কান্না ভেজা গলায় ধন্যবাদ জানান পৌলমী।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার ভালবাসা, আপনাদের সবার প্রার্থনা সত্ত্বেও হয়তো উনি শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন। কিন্তু উনি আমাদের মধ্যে চিরকাল থেকে যাবেন। ওঁনার আত্মা, ওঁনার প্রাণ আমাদের মধ্যে থাকবে। ওঁর জীবনটাকে আমরা সেলিব্রেট করব। আমি সবাইকে বলছি, আপনারা দুঃখ পাবেন না, কষ্ট পাবেন না। আমরা হাসিমুখে বাবার কথা ভাবব, ওনার জীবনটাকে আদর্শ মেনে সেলিব্রেট করে চলব’।
এদিন ফেসবুকেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে পৌলমী বসু লেখেন- ‘অত্যন্ত শোকার্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি, আমার প্রিয় মানুষটা, আমার বাবা আজ সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমরা গোটা পরিবার বিধ্বস্ত। আপনারা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করুন’।
পৌলমী যোগ করেন, আমার মা ও ছেলের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্লিজ বিপদ বাড়াবেন না, আমার বাবাও এমনটাই চাইতেন।আপনারা বাবাকে ভালোবেসে থাকলে ওঁনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করুন। এই মুহূর্তে কারুর সঙ্গে যোগাযোগের মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই'।
গত ৫ অক্টোবর অভিনেতার কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরের দিন হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দু-সপ্তাহে করোনা মুক্ত হলেও, কোভিড পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন সৌমিত্রবাবু। গত তিনদিন তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি মারাত্মক বিগড়ে যায়। কোনওরকম চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছিলেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিত্সকরা। আজ সব লড়াই শেষ হয়ে গেল।
সৌমিত্র অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, ঝিন্দের বন্দি, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, চারুলতা, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, শাখা-প্রশাখা, গণশত্রু, কোনি… তালিকাটা অন্তহীন। তবে শুধু সিনেমা নয় বাংলা সংস্কৃতির সব ধারাতেই নিজের অবদান রেখে গেলেন সৌমিত্র।