এখনও এই খবরটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বাঙালির। তাঁদের প্রাণের অপু, পছন্দের ফেলুদা, কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টলিগঞ্জে। আজ নিঃসন্দেহে বাংলা চলচ্চিত্রের একটা কালো দিন। রুপোলি দুনিয়ায় ছয় দশকের অভিযানে এদিন ইতি টানলেন সৌমিত্রবাবু। আজ, দুপুর ১২.১৫ মিনিটে মিন্টোপার্ক লাগোয়া বেলেভিউ ক্লিনিকে প্রয়াত হন অভিনেতা। কোডিভ সমস্যা কাটিয়ে উঠলেও তাঁর শরীরে একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শুক্রবার বর্ষীয়ান অভিনেতার হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। গতকালই চিকিত্করা জানিয়ে দিয়েছিলেন মাল্টি অর্গ্যান ফেলিউরের কথা, বলা হয়েছিল ‘মিরাকলও শেষরক্ষা করতে পারবে না'।
রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ধরে রাখা গেল না বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বটবৃক্ষকে। ছানা দাদুর এই প্রয়াণ বড় ধাক্কা দেবের কাছে। ফেসবুকে তিনি লেখেন- ‘তুমি যেখানেই থেকো ভালো থেকো, তোমাকে খুব মিস করবো ছানা দাদু’। সাঁঝবাতি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন দুজনে।
কিংবদন্তীর প্রয়াণে টলি তারকা জিত টুইট করেন- বাংলা সিনেমার রাজা চলে গেল, একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। উনি আজীবন আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। শোকপ্রকাশ করলেন মিমি, ঋতুপর্ণরা।
টুইট বার্তায় সৌমিত্রকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীলরা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিকের পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। করোনা পরবর্তীতে শেষ পরমব্রত ছবিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্রবাবু। প্রাণের চেয়েও প্রিয় সৌমিত্র জেঠুকে হারিয়ে শোকবিহ্বল পরম টুইট বার্তায় অনুরোধ করলেন তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে সংবাদমাধ্যমকর্মীরা যাতে তাঁকে বিব্রত না করে। কারণ ‘এই মৃত্যু এই ক্ষতি শব্দ দিয়ে বোঝানো যাবে না, এটা একান্তই আমার একার’।
আজকের জেনারেশনের ফেলুদা আবির চট্টোপাধ্যায় লিখলেন- কিংবদন্তি চলে গেলেন অন্তিম বিদায় জানিয়ে… তোমাকে মিস করব, সিনেমা তোমাকে মিস করবে।
বছরের শুরুতেই বাবাকে হারিয়েছেন আর পিতৃসম সৌমিত্র জেঠুকে হারিয়ে স্বস্তিকা লিখলেন- এই বছরটা সবকিছু সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে… বাবা-মা, কিংবদন্তি,ছেলেবেলা,নস্টালজিয়া… সব.. নির্দয় বছর'।
বাংলা সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বাঙালির প্রাণের অপু, সবচেয়ে পছন্দের ফেলুদা। খিদ্দা হয়ে তিনি বাঙালিকে ফাইট করতে শিখিয়েছেন। সত্যজিতের হাত ধরে সেই ১৯৫৯ সালে অপুর সংসার দিয়ে শুরু হয়েছিল এই বর্ণময় ব্যক্তিত্বের সফরনামা। এরপর তপন সিনহা, মৃণাল সেন,তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়,অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষের মতো আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬১ বছর দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি। আজ সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে না-ফেরার দেশে তিনি। তবে বাঙালির মনের মণিকোঠায় আজীবন বিরাজমান থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।