নিজের বায়োপিকে অভিনয় করবার সুযোগ বা সাহস কতজন অভিনেতার হয়? জানা নেই। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই কঠিন কাজটা শেষ করে গিয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাঘ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’ পরিচালনা করেছেন টলিপাড়ার নতুন পরিচালক,অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। করোনা পরবর্তী সময়ে শ্যুটিং চালু হওয়ার পর নির্ভয়ে সেটে ফিরেছিলেন ৮৫ বছর বয়সী সৌমিত্র। জুলাই মাসেই অভিযানের শ্যুটিং শেষ করেন তিনি। সৌমিত্র অভিনীত শেষ ফিচার ফিল্ম এটি।
ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল সৌমিত্র বায়োপিকের শ্যুটিং। ছবিতে কমবয়েসি সৌমিত্র ভূমিকায় দেখা যাবে যিশু সেনগুপ্তকে। মার্চে লকডাউন ঘোষণার আগে সৌমিত্র নিজের অংশের বেশিরভাগ দৃশ্যই শ্যুট করে ফেলেছিলেন। কলকাতার দুই জায়গায় তিনদিনের শুটিং বাকি ছিল। করোনাবিধি মেনে শুটিংয়ের সেই কাজ সম্পূর্ণ করেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। টলিপাড়ার বটবৃক্ষ ছিলেন তিনি। কেরিয়ারের শুরু থেকেই পরমব্রতও বহুবার সান্নিধ্য পেয়েছেন কিংবদন্তি শিল্পীর। তবে সৌমিত্র বায়োপিক তৈরি করতে গিয়ে আত্মার যোগ গড়ে উঠেছিল দু-জনার। স্বভাবতই এই মৃত্যু পরমের ব্যক্তিগত ক্ষতি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ধ পোস্টে সেই স্মৃতিচারণা করেছেন।
পরমব্রত লেখেন-'অনেকে ওনাকে গুরু মানেন,শিক্ষক বলেন,আমার কাছেও অবশ্যই তাই, আমার নিজের একান্ত নিজের উদয়ন মাস্টার,কিন্তু সব ছাড়িয়ে উনি ছিলেন একজন পরম বন্ধু ! গত দেড় বছরে বিশেষ করে , যেমন তৈরি হয়েছিল শ্ৰদ্ধা , ভালোবাসা , তেমনই হতো ছোট খাটো মতান্তরও , যেমন হয় বন্ধুদের'।
রবিবার সৌমিত্রর শেষযাত্রায় অংশ নিতে দেখা যায়নি পরমব্রতকে। সেই কারণও ব্যাখ্যা করেন অভিনেতা। জানান, তিনি আপতত হিমাচল প্রদেশে রয়েছেন, তবে ‘থাকতে পারছি না এক দিকে ভালোই’। পরমের কথায়- 'আজ জীবনের একটা অংশ চলে গেলো , বাদ হয়ে গেলো একই সঙ্গে একজন শিক্ষক, পথ প্রদর্শক এবং বন্ধু হারালে কিরকম লাগে সেটা বলার চেষ্টা করে বৃথা সে পথ এ যাবো না। কাজের কারণ এ হিমাচল প্রদেশ এ আছি শেষ যাত্রা এ থাকতে পারছি না এক দিকে ভালোই, এ দুঃখ নিভৃতে,নির্জনে, একান্তেই মানায় হাত জোড় করে অনুরোধ করছি সংবাদ মাধ্যম এর বন্ধু দের কাছে , ‘প্রতিক্রিয়া’ জানতে চেয়ে ফোন করবেন না ! এ বারের-টায় ছেড়ে দিন ! এ বিয়োগ বড়ো ব্যক্তিগত, এ কষ্ট শব্দের নয়, একার’।
সেপ্টেম্বর মাসে অভিযান ছবির শ্যুটিং সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। রুপোলি পর্দায় সৌমিত্রর এই দ্বিতীয় অভিযান দেখতে সজল চোখে অপেক্ষায় থাকবেন সিনেপ্রেমী বাঙালি। অভিযান ছাড়াও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে সৌমিত্রর ‘বেলাশুরু’। সত্যি তো সৌমিত্রর মতো অভিনেতার 'অভিযান'-এর বেলা শেষ হয় না, সৌমিত্র মানেই ‘বেলাশুরু’।
গত ৫ অক্টোবর করোনা আক্রান্ত হন বর্ষীয়ান শিল্পী। করোনাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন, তবে পূর্ববর্তী শারীরিক জটলিতা করোনার জেরে মাথাচাড়া দেয়, স্নায়ুর সমস্যার পাশাপাশি প্রভাব পড়ে হার্ট,কিডনিতে। অবশেষে চল্লিশ দিনের দীর্ঘ লড়াইয়ে ইতি টেনে রবিবার ‘তিন ভুবনের পারে’ চলে গেলেন সৌমিত্র। জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেও অপু বাঙালি মনে অপরাজিত। এ সংসারে তিনি বিরাজ করবেন চিরকাল।