কবিবন্ধু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের তাগাদাতেই না কি কাব্যজগতে প্রবেশ ঘটেছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা তাঁর কবি সত্তার নিরন্তর উন্মেষ ঘটিয়েছিল, একাধিক সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা।
মঞ্চ ও রুপোলি পর্দায় তাঁর অবিস্মরণীয় অভিনয় ছয় দশক ধরে মুগ্ধ করেছে দেশ ও বিদেশের অগণিত দর্শককে। তবু নিজেকে প্রকাশ করতে কবিতার সঙ্গ আজীবন উপভোগ করে গিয়েছেন সৌমিত্র।
কবি জয় গোস্বামীর প্রশ্নের উত্তরে একদা জানিয়েছিলেন, অভিনয় করতে গেলে অভিনীত চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাতেই মনোযোগ থাকে। বলেছিলেন, নিজের মধ্যে সেই চরিত্রকে জাগিয়ে তুলে পরে তাকেই দর্শকের দরবারে প্রকাশ করায় যে আনন্দ, তার চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্তি দিতে পারে কবিতা। লিখতে বসে কোনও আড়াল খুঁজতে হয় না, বরং হৃদয় নিঙড়ে অন্তরাত্মাকে উজাড় করে দেওয়াই কবিতার দস্তুর, মনে করতেন সৌমিত্র।
কবিতার জগতে প্রবেশের পর থেকে তাঁকে আর পিছু ফিরতে হয়নি। সর্বমোট ১২-১৪টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন সৌমিত্র। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্য সংগ্রহ। এর আগে বই আকারে পাওয়া গিয়েছে তাঁর গদ্য ও নাট্য সংকলন। ভারতীয় তথা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে তাঁর মতো এমন বহুপ্রতিভাধর চরিত্র বিরল। কবিতা লিখতে বসে কোনও শর্ত রাখেননি কোনও দিন। উল্টে তাঁর কলম থেকে বেরিয়েছে অনবদ্য শব্দের প্রকাশ, মনে করেন জয় গোস্বামী।
কলেজ জীবন থেকেই কবিতা লেখার অভ্যাস রপ্ত করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর রচিত মোট ১৪টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াব বলে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ৮০০ পৃষ্ঠার ‘কবিতা সমগ্র’।
এ ছাড়া বহু চর্চিত লিটল ম্যাগাজিন ‘এক্ষণ’ সম্পাদনাও অনিল আচার্যের সঙ্গে তিনি করেছেন কয়েক বছর।