আরজি কর কাণ্ডে শনিবার রাতে নাটকীয় মোড়! একদিকে তিন ঘণ্টা ধরে মমতার কালীঘাটের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে গেল আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। অন্যদিকে এই মামলায় শনিবার রাতে তৎপর সিবিআই। আরজি করের নির্যাতিতার খুন ও ধর্ষণের মামলায় এদিন গ্রেফতার হলেন সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল।
আরজি কর সংক্রান্ত দুনীর্তি মামলায় আপতত জেল হেফাজতে সন্দীপ। তাঁকে এবার খুনের মামলায় গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা, অন্যদিকে প্রায় মধ্যরাতে বিয়ারসিং হাসপাতালে চলছে ওসির মেডিক্যাল পরীক্ষা। এই গ্রেফতারিকে নিজেদের নৈতিক জয় হিসাবেই দেখছে কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তাররা।
মমতার বাসভবনে গিয়ে শুরুতে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করার ব্যাপারে অনড় ছিল প্রতিবাদী চিকিৎসকরা। পরে অবশ্য দু-পক্ষের ভিডিয়ো রেকর্ডের কথা জানায় তাঁরা। তাতেও রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বাইরে এসে চিকিৎসকের সামনে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিন ঘণ্টাতেও জটিলতা কাটেনি। অবশেষে ভেস্তে যায় বৈঠক। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাঁদের বার করে দেন।
আপোস নয়, এটা যুদ্ধের সময়! সেই বার্তা দিয়েই স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনা মঞ্চে ফেরেন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। এরপর সেখান থেকে চোখ ছলছল চোখে বার্তা দেন তাঁরা। এক আন্দোলনকারীকে বলতে শোনা গেল, ‘আমাদের আন্দোলনকে প্রথম দিন থেকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত এক শ্রেণির মিডিয়াকে বলতে শোনা গিয়েছে, এদের মধ্যে অনেকের স্বচ্ছতার অভাব আছে। এদের নাকি অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে…আমাদের বিরুদ্ধে ম্যালিসিয়াস ক্যাম্পেন চলছে। আমরা জানি আমরা ঠিক জিনিসের জন্য লড়াই করেছি….আমাদের পিছিয়ে আসার জায়গা নেই…’।
এদিন ডাক্তারদের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে পরিচালক সৌরভ পালোধি লেখেন, ‘ডাক্তাররাই আমাদের হিরো। রাজ্যের সার্জারি চলছে। হাউ হাউ করে কান্না পাচ্ছে। এই লড়াই দেখিনি।’
রানা সরকার এদিন টলিউডকে আক্রমণ করে জানান, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হলে কবেই স্ট্রাইক উঠে যেত’। মমতার দরজায় গিয়েও নিজেদের দাবিতে অনড় থেকেছেন চিকিৎসরা। সেই মনোভাবকে কুর্নিশ করলেন রানা।
লাইভস্ট্রিমিংয়ের দাবি ছেড়ে কোনওরকম ভিডিয়ো ছাড়াই বৈঠকে একদম শেষ পর্যায়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকার। মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রেখে শুধুমাত্র বৈঠকের মিনিটস অফ মিটিং নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন ডাক্তাররা। এমনই দাবি করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা দাবি করলেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা এসে বলেন যে আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আজ আর হবে না। বাসে করে বেরিয়ে যেতে বলেন। নাহলে বাস ডেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন চন্দ্রিমা। এই ঘটনা নিয়ে রাহুলের প্রশ্ন, ৩৫ দিন বেশি দেরি না ৩ ঘণ্টা?
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনা আদেও হবে? নাকি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপেই কর্মবিরতির জট কাটবে? সেই উত্তরের অপেক্ষাতেই গোটা রাজ্য।