হাজার প্রতিকূলতা সত্বেও শুরু হওয়ার পর একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি CPIM-এর শ্রমজীবী ক্যান্টিন। সম্প্রতি ৫০০ দিন পেরোনোর সুবাদে সোমবার যাদবপুরে এক বড়সড় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল দলের তরফে। মিছিল, কেক কাটা, CPIM কর্মী ও সমর্থকদের গান সব মিলিয়ে সাড়ম্বরে পালন করা হলো ওই দিন। কিন্তু এবার এই অনুষ্ঠান ঘিরেই শুরু হয়েছে বিস্তর জলঘোলা। সেই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে দেখা গেছে সদ্য গেরুয়া শিবির ছেড়ে আসা অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রূপা ভট্টাচার্যকে। আর তাতেই চটেছেন টলি-অভিনেতা তথা একনিষ্ঠ বাম সমর্থক রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রীলেখা মিত্র। পরিস্থিতি এতটাই বিগড়েছে যে প্রকাশ্যে দল ছাড়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা! অনুষ্ঠানে CPIM নেতা শতরূপ ঘোষের সঙ্গে তাঁদেরছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট হওয়া মাত্রই তাতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেক পার্টি সমর্থকও।
বহুদিন ধরেই ধরেই বিজেপি সমর্থক অভিনেতা অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী রুপা ভট্টাচার্য। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে জল মেপে নয় বরং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বিজেপির হয়ে কথা বলতে ও প্রচার সারতে কয়েক বছর আগে থেকেই নিয়মিত দেখা গেছে টলিপাড়ার এই দুই চেনা মুখকে। তবে সম্প্রতি বেশ খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েই গেরুয়া শিবির ত্যাগ করেছেন তাঁরা। বিধানসভা নির্বাচনে 'নতুন' তারকা-মুখদের ঠেলায় টিকিট না পাওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত ছিল তাঁদের। বহুবার এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখও খুলেছেন তাঁরা। কিন্তু যেভাবে আচমকা গেরুয়া থেকে লাল শিবিরে হাজির হয়েছেন তাঁরা, তা দেখে চমকে উঠেছেন এবং ভ্রু কুঁচকেছেন অনেকেই। অনিন্দ্য, রূপাদের অবশ্য যুক্তি করোনার সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে যেভাবে রেড ভলেন্টিয়াররা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ ও সমর্থন জানাতেই এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন তাঁরা।
CPIM পার্টির সমর্থক হিসেবে সুবিদিত রাহুল এবং শ্রীলেখা অবশ্য এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এতটাই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে লিখেছেন, পার্টির সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবেন না তাঁরা। ফেসবুকে শ্রীলেখা লিখেছেন, 'নিজেরকে কমিউনিস্ট বলে উল্লেখ করার মতো সাহস আমার নেই। কিন্তু, আমি বামপন্থী। বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী। আমায় কি প্রলোভন দেওয়া হয়নি? এমনকী অন্য দলের থেকে আমায় বিধানসভার টিকিটের প্রস্তাব পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। গ্রহণ করলে আমার জীবনটাও অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু, তা আমি করিনি। বদলে যে মতাদর্শে বিশ্বাস করি, সেখানেই অনড় থেকেছি। নিজের সাধ্যমতো পার্টির হয়ে প্রচার করেছি।' এখানেই না থেমে টলি-অভিনেত্রী আরও বলেন তাঁর ইন্ডাস্ট্রির যে সমস্ত সহকর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিয়ে টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং পরে সেই কারণে দল পর্যন্ত ছাড়লেন তাঁদের যদি পার্টি স্থান দেয়, তবে তিনি এইমুহূর্তে দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রস্তুত। এ প্রসঙ্গে শ্রীলেখা লিখেছেন, ' আমি অনেক অপমান আর কষ্টের জায়গা থেকে বলছি, আমি CPIM-এর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করব। এরাই আমাকে গালমন্দ করেছিল একদিন। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করা অসম্ভব।'
অন্যদিকে, রাহুল লেখেন, 'CPIM এর মঞ্চে যদি টিকিট না পাওয়া হতাশ বিজেপি জায়গা পায় তাহলে আমি আজ এই মুহূর্ত থেকে CPIM এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম|আমার বামপন্থা CPIMএর মুখাপেক্ষী নয়|যে একবারের জন্য ও সাম্প্রদায়িক দলের সাথে জড়িয়েছে,বিশেষত সে যদি সেলিব্রিটি হয়,তার সাথে কোনোদিন এক মঞ্চে আমি থাকব না| CPIM ভেবে দেখুক আমাদের প্রয়োজন,না তাদের|