সপ্তাহের শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ার রোষের মুখে তৃণমূলের দুই নেতা- দেবাংশু ভট্টচার্য এবং কুণাল ঘোষ। অভিনেত্রী মৌসুমী ভট্টাচার্যকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং কুরুচিকর রসিকতা করার জেরে তোপের মুখে শাসক দলের দুই মুখ। সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে দেবাংশু-কুণালের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন শ্রীলেখা মিত্র, রূপাঞ্জনা মিত্ররা।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ মঞ্চে প্রায়ই দেখা যায় মৌসুমীকে। শুরু থেকে আর্জি করের ঘটনায় সরব তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দেবাংশু-কুণাকে বিদ্রুপ করে বলেন, ‘কুণাল ঘোষ ও দেবাংশু ভট্টাচার্যকে জনগণ যে দিন হাতে পাবেন, সে দিন ওদের কে বাঁচাবে আমি দেখব… মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু ওদের বাঁচাতে আসবেন না।’ এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। এর প্রেক্ষিতেই দেবাংশুর পাত্রী হিসাবে মৌসুমীকে বেছে খিল্লি করেন কুণাল। লেখেন-'হ্যাঁ রে দেবাংশু, তোর পাত্রী দেখার কাজটা এগোব?...' দেবাংশু পালটা লেখেন, 'সিরিয়ালে কাজ নেই, বদন বিগড়ে গেছে..'। মৌসুমীকে ‘দজ্জাল পাত্রী’ বলেও লেখেন দেবাংশু।
এর জেরেই সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। গর্জে উঠলেন শ্রীলেখা মিত্র। অভিনেত্রী বরাবরই স্পষ্টবক্তা। বামমনস্ক অভিনেত্রী ফেসবুকে লেখেন, ‘এই কুণাল ঘোষদের কথায় না নেচে এদের চিনে রাখুন। এরাই সম্ভাব্য ধর্ষক। তীব্র ধিক্কার জানাই… ভাষা দেখুন… বদন…!! কতো বড় আস্পর্ধা, ওর মা-বার লজ্জা হয় না এইরকম ছেলের জন্ম দিয়ে?’
চুপ থাকেননি স্বস্তিকাও। তিনি লেখেন, ‘যে রাজ্যে পাবলিক ফোরামে টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে নিয়ে ঠাট্টা, মস্করা, কুৎসা করে মিসোজিনিস্ট প্যাট্রিয়ার্কাল শাসকদলের নেতারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান, সে রাজ্যে নারীর স্বাধিকার বা সন্মান ফিরে আসবে কী?’
রূপাঞ্জনা মিত্রর ভাবনা গোটা বিষয় নিয়ে একটু অন্যরকম। তিনি লেখেন, আমরা কি আমাদের রোজকার ভাষায় একটু সংযত হতে পারি? যেমন পিসি, চটি চাটা, ফেকুজি, গদি মিডিয়া, পাপ্পু, ভাইপো ইত্যাদি তে????? এই নাম গুলো কারা বলা শুরু করেছেন সেই সূত্র গুলো মাথায় রেখেই কথা বলতে বাধ্য হলাম। নিজেদের ভাষাকে আমরা যদি আগে না শুধরোই তাহলে অন্য কাউকে শুধরোতে পারার শুরু থেকেই দূরে থাকবো।
এই ভার্বল অ্যাবিউস গুলো থেকে নিজেদের কে দূরে রাখুন আর সিস্টেম পরিষ্কার করতে মাথা ঠান্ডা রাখুন….'।
অভিনেত্রী অনিন্দিতা রায়চৌধুরী তোপ দেগে লেখেন, ‘কি ভীষণ বিরোধিতা হচ্ছে মতাদর্শের!! বাপরে!! মানুষ অমানুষ গুলিয়ে যাচ্ছে একেবারে!!!! এতো কথা বলার দরকার কি সেটাই তো বুঝিনা!! পেট গরম হলে যেমন ওয়াক করে হজম না হওয়া পচা খাবার বেরিয়ে আসে সেরকম করে বেরিয়ে আসছে রূপগুলো!!ভালোই একদিক থেকে!!!!!!’ এই পোস্টের কমেন্টে সোহিনী সরকার লেখেন, ‘এরা নাকি ধর্ষকদের শাস্তি দেবে?’
নারী-সুরক্ষা, নারী-স্বাধীনতা নিয়ে এত আন্দোলন। সে জায়গায় শাসক দলের দুই নেতার তরফে মৌসুমীর দিকে ধেয়ে এসেছে কদর্য আক্রমণ। আক্ষেপের সুরে অভিনেত্রী হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানিয়েছেন, 'সরকারের লোক হয়ে যদি মেয়েদের নিয়ে এই ভাবনা হয়, তাহলে শুধুই বলব এটা ওদের শিক্ষা। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এইটুকুই বলতে চাইব এই লোকগুলোর জন্য আপনি বদনাম হচ্ছেন। কই মুখ্যমন্ত্রী তো এই ভাষায় কথা বলেন না। রাগের মাথাতেও উনি কাউকে এই ভাষায় আক্রমণ করেননি। ওঁনার অধীনে থাকা এই সব ক্যারেক্টারগুলোর জন্য, যারা মেয়েদের সম্মান রাখতে পারে না। কী ভাষা! আমাকে বডি শেমিং করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এই লোকগুলোকে দল থেকে বার করে দেওয়া। একটু ভাবুন। এবার ভাবা উচিত'।