শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেত্রী
খবরটা শুনে আমি হতবাক, কী বলব, কী লিখব কিছুই তো বুঝতে পারছি না। জিমে ছিলাম, আচমকা প্রদীপদার চলে যাওয়ার খবরটা শুনে ফিরে এলাম। হয়ত উনি আমার আত্মীয় নন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর যে দুঃখটা পেয়েছি, সেটা হয়তবা হবে না, কিন্তু একটা লোক এভাবে চলে যাবে! কিছুদিন আগেই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁর স্টেটাসে লেখা 'trying to reduce', সেটা নিয়ে আমি আর প্রদীপদা মজা করেছি। আমি বললাম, তুমি এবার স্টেটাসটা পালটাও। সেই কতবছর ধরে একই লেখা…।
প্রদীপদার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। উনি আমাকে একটা বড় ব্রেক দিয়েছিলেন,কখনওই সেটা ভুলব না। আমার মনে আছে, প্রথমে আমায় আপনি করে কথা বলেছিলেন, 'কলকাতা থেকে এসেছেন আপনি', তারপর সেটা তুমি হল, পরে তুই হয়ে গিয়েছিল। এটাতেই বোঝা যায়, কতটা আপন করে নিয়েছিলেন। কাজ পাগল মানুষ উনি, কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। ওঁর পরিবারের সঙ্গেও একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ২০০৩-এ আমি Coca-Cola-র বিজ্ঞাপন করেছিলাম আমির খানের সঙ্গে, সেবছরই আার বিয়ে হয়ে যায়। অক্টোবরে বিজ্ঞাপন, আর নভেম্বরের ২০ তারিখে আমার বিয়ে…। তবে কোনওদিন দারুণ অ্যাম্বিসাস ছিলাম না। তখন বিয়ে করব, সেটাই মাথায় ঘুরছিল। কেরিয়ারের কথা ভাবি না, বিয়ে, ভালোবেসে সংসার, এসবই ভেবেছি তখন। মনে হত কীসের কেরিয়ার! প্রদীপ সরকার আমায় বিয়ের ঠিক আগেই ফোন করেছিলেন, ১৭ নভেম্বর ছিল দিনটা। ওয়াশিং পাওডারের বিজ্ঞাপন করতে। আমি মজা করে বললাম, তুমি কি চাও বিয়ের আগেই ডিভোর্স হয়ে যাক…। বললেন,ও তোর বিয়ে না! সরি সরি…।
আরও পড়ুন-‘এই সপ্তাহেই দাদার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল!’ প্রদীপ সরকারের মৃত্যুতে হতবাক রানি
দাদার হাত ধরে Tata Tiscon-এর বিজ্ঞাপন যখন করেছিলাম, বিদ্যা বালান আমার স্ক্রিন টেস্ট নিয়েছিলেন, এরপর সইফ আলি খানের সঙ্গে লেজ, নেসলে, এয়ারসেলের বিজ্ঞাপনে কাজ করি, সবই দাদার হাত ধরে। এমনকি সইফ-বিদ্যার 'পরিণীতা'-তেও একটা চরিত্রের জন্য বলেছিলেন।
খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন, খাওয়া নিয়েও আমাদের একটা সুন্দর বন্ডিং হয়েছিল। মুম্বইতে যখন গিয়েছিলাম, উনি আমায় রেস্তোরাঁ নিয়ে গিয়ে খাইয়েছিলেন, বৌদি, দাদা দুজনেই ছিলেন। ওঁর বাড়িতেও গিয়ে খেয়েছি, ওঁর অফিসে যেতাম আড্ডা দিতে। অনেক স্মৃতি, অনেক…। আমি এখনও বিষয়টা থেকে বের হতে পারছি না।কিছুজিন আগে বিনোদিনী নিয়ে যে কনফিউশন তৈরি হয়েছিল, সেটাও দেখে উনি আমায় ফোন করেছিলেন, এই তো কয়েকদিন আগে। আমি এখান থেকে গেলে, ফোন করে বলতাম, দাদা ইলিশ মাছ নিয়ে যাব? সঙ্গে সঙ্গে বলতেন নিয়ে আসবি…! খেতে খুব ভালোবাসতেন। খবরটা পেয়ে দাদার নম্বরে ওয়াটসআপ করলাম, খুব খারাপ লাগছিল। বাবার কথা মনে পড়লে বাবার নম্বরেও আমি মেসেজ করি…। আশেপাশে আছেন মনে হয়। আত্মা মুক্তি পাক, আবারও সুন্দর একটা জন্ম পাক, আবার যদি দেবত্মর স্থানে পৌঁছে যান, তাহলে হয়ত আর জন্মও নিতে হবে না। এসব অবশ্য আমার নিজস্ব বিশ্বাস…। কাছের মানুষদের কষ্টটা এখন অনেক, সকলকে অনুরোধ পরিবারকে একটু স্পেস দিন এই সময়টা…।
(সাক্ষাৎকার থেকে অনুলিখিত)