মেয়ের বাবা-মা হয়েছেন, এই মুহূর্তে সেই আনন্দে আত্মহারা কাঞ্চন-শ্রীময়ী। অবশেষে স্ত্রী শ্রীময়ী ও ঘরের লক্ষ্মীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। ৭ নভেম্বর, লক্ষ্মীবারেই কাঞ্চনের ঘরে পা এসেছে তাঁর ছোট্ট লক্ষ্মী। মেয়ের বাবা হয়ে কাঞ্চন মল্লিক যতটা খুশি, একইভাবে নতুন মাতৃত্বে অভিভূত অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ। Hindustan Times Bangla-র ফোন পেতেই তাঁর গলায় ধরা পড়ল সেই উচ্ছ্বাস।
ফোন করতেই শ্রীময়ী বললেন, ‘হাসপাতাল থেকে আজই (৭ নভেম্বর) তো সবে এলাম। বাড়িতে আসার পর থেকে মেয়ে সারাক্ষণ কাঁদছে, অপরিচিত পরিবেশ, বুঝতে পারছে না ও হয়ত এখনও। কোলেই থাকতে চাইছে তাই। আজ ও সারাক্ষণ কোলেই ছিল, কিছুতেই শোয়ানো যাচ্ছিল না।
আমার তো দারুণ একটা অনুভূতি। বিষয়টা ঠিক যেন এখনও বুঝেই উঠতে পারছি না। যে মা হয়ে গেলাম! কারণ প্রেগনেন্সি জার্নিটায় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা, হরমোনাল বিভিন্ন পরিবর্তন হয়, মুড সুইং হয়। আর এবার মা হয়ে গিয়েছি। যখন প্রথম ওকে দেখলাম সেই মুহূর্তটা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। এই জার্নিটা নিয়ে মায়ের মুখে কাঞ্চনের দাদা-বউদির কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বুজতে পাারছি না যে আমি মা হয়ে গিয়েছি। ওকে দেখলে কেমন যেন পুতুলের মতো লাগছে।'
খুশিতে উচ্ছ্বসিত শ্রীময়ী বলে চললেন..
'একদিন তো ওকে আমি হ্য়ালো বলে ডাকছি। কাঞ্চন শুনে বলল, কীরে! ওটা তো তোর মেয়ে, বল সোনা মা। ঠিক যেন বুঝে উঠতেই পারছি না যে মা হয়ে গিয়েছি। আজই যেমন দিদিভাই এসেছে। আমি ওকে বললাম, ওকে একটু কোলে নেতো আমি একটু ওকে দেখি। দিদিভাই তখন বলল, কী রে দেখবি কী! তুই তো মা, ওকে কোলে নে, ফিড করা, ও কি পুতুল নাকি যে দেখবি। কেমন একটা অদ্ভুত মনে অনুভূতি হচ্ছে।
প্রেগন্যান্সিতে অনেককিছু হয়, ওজন পারে, শরীরে বিভিন্ন কিছু হয়, খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন মনে হচ্ছিল আর পারছি না, আর পারছি না। তবে যে মুহূর্তে OT-তে গেলাম ভীষণ টেনশন হচ্ছিল। সকলেই বোঝাচ্ছিলেন যে কিচ্ছু হবে না, কোনও ভয় নেই। কাঞ্চন তো ওটি-তেই ছিল। যে মুহূর্তে ডাক্তারবাবু ওকে বের করে বললেন, It's a beautiful baby girl। তখন তো আমার মনে হল সেলাই-টেলাই কোনও ব্যাপারই না। কাঞ্চন তো চেঁচিয়ে উঠেছিল। ও যেভাবে চেঁচিয়েছে আমিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ও তখন আনন্দে আত্মহারা। এরপর আমিও সমস্ত ব্যথা ভুলে উঠে বসেছি, ওকে ফিড করিয়েছি, কোনও ব্যথাই তখন ব্যথা বলে মনে হচ্ছিল না।
আরও পড়ুন-বউকে প্রণাম করে ট্রোল হয়েছেন, বিক্রান্ত মাসে বলছেন, ‘বাড়িতে শান্তি চাইলে এটাই করা উচিত…’
ডাক্তারবাবু যখন প্রথম কাঞ্চনকে বলেছিল তোমাকে ওটিতে থাকতেই হবে। তখন ও বলেছিল, ব্লাড দেখলে মাথা ঘুরে যায়। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ও ৯ মাসের একটা প্রেগন্যান্সি জার্নি কাটালো, আর তুমি থাকবে না, থাকতেই হবে। চলো গান শোনাব তোমাকে। তো কাঞ্চন ছিল ওটিতে।
আর আগে যখন কাঞ্চনকে জিগ্গেস করতাম, ছেলে না মেয়ে কী চাও? ও সবসময় বলেছে, ছেলে হোক বা মেয়ে, যেন সুস্থ হয়, তাহলেই হবে। পৃথিবীতে ঈশ্বর যা পাঠাবেন তাঁকেই গ্রহণ করব। তবে যখন ওর উচ্ছ্বাস দেখলাম, তখন বুঝলাম ও মনে মনে মেয়েই চেয়েছিল। ও পুরো পাগলের মতো আত্মহারা। মেয়েও বাবার গলা খুব চেনে। কাঞ্চন যখন ডাকে আমার সোনা মা, মা…, ও চোখের মণি ঘোরাতে শুরু করে। আমি দেখে বললাম, বাবা! বাবাকে তো খুব চেনে। আবার চোখে আলো লাগে বলে কাঞ্চন মেয়ের চোখ ঢেকে রাখে হাত দিয়ে। বাড়ির লোকজন তো বলছেন, লক্ষ্মী, দুর্গা, ভবতারিণী, সব এসেছে।
ওর নামটা আমি আর কাঞ্চন মিলেই ঠিক করেছি। একটা ছেলের নাম, একটা মেয়ের নাম বেছে রেখেছিলাম। আর আমরা যেহেতু কৃষ্ণের ভক্ত, তাই কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখব, ঠিক করেছিলাম। এরপর মেয়ের নাম হিসাবে ওই নামটাই মাথায় আসে। সকলেরই খুব পছন্দ হয়েছিল নামটা। আমরা ইউনিক কিন্তু বাঙালি নাম চেয়েছিলাম।'
শ্রীময়ী আরো বলেন, ‘আমি যখন অন্তঃসত্ত্বা কাঞ্চন তখন পরপর কাজ করেছে, তবে এরই মাঝে আমাকে নিয়মিত চেকআপে নিয়ে যেত। আর এই কয়েকদিন হাসপাতালেই থাকছিল। সকালে উঠে ব্রাশ করেই ও প্রথম বলত, আমি আগে মেয়েকে দেখে আসি, পরে চা খাব। আবার দুপুরের লাঞ্চ ব্রেকেও ও আগে গিয়ে মেয়েকে দেখে আসত। আমি শনিবার ভর্তি হয়েছি, ডাক্তাররা চেকআপের পরই বলল, ভর্তি করতে হবে, ওজন বেড়ে গেছে বাচ্চার। আর রবিবার করা যেত না, কারণ ভাইফোঁটার ছুটি ছিল। তাই শনি, রবি, সোম মঙ্গল-বুধ ছিলাম হাসপাতালে। গতকালই ফিরতাম, তবে আসতে পারিনি, কারণ পিঠে খুব ব্যথা হচ্ছিল, তাই হাসপাতালেই থেকে যাই, আজ সকালেই ফিরেছি।
আজ থেকে রাত জাগার পালা, যদিও গোটা দুপুর জাগিয়ে রেখেছে মেয়ে। ও খিদে পেলে চিৎকার করে কাঁদে। কাঞ্চন কিন্তু সবকিছুর জন্য তৈরি। বলেছে আমি মেয়ের জন্য সব করব। ঢেকুর তোলানো থেকে, ন্য়াপি বদলানো সব করবে বলেছে। আমি খেয়ে নাও, খেয়ে নাও বললেই বলছে, এই ওকে একদম বকবি না। মেয়ে ঘুমোচ্ছে, তাও ৪০ বার বলছে ওকে একবার দেখে আসি, ও ঘুমোচ্ছে তো, ওর মুখে কাঁথা চাপা পড়েনি তো। এসি ঠিক আছে তো, ঠান্ডা লাগছে না তো। ও অবসেশড। আমি রাত জাগার কথা বললেই বলছে, এইরকম বলিস না, তুইও একদিন জাগিয়েছিস। ওকে কোলে নিয়ে নেব। তবে ও এতটাই ছোট, কিছুটা ভয়ও পাচ্ছে। কোলে নিতেও সাহস পাচ্ছে না। তোলার সময় বলছে আমার তো হাত-পা কাঁপছে…'
কাঞ্চন-শ্রীময়ীকে আরও একবার বাবা-মা হওয়ার জন্য Hindustan Times Bangla-র তরফেও রইল অনেক শুভেচ্ছা।