শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কলমের সাহায্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে গর্জে উঠেছেন। যদিও নানা সময় তাঁকে কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে। তবুও তিনি কখনই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ছাড়েননি। এবারও তার অন্যথা হল না। বাংলাদেশের যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে ভারতের পতাকাকে অবমাননা করার সেটার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তিনি।
কী লিখলেন শ্রীজাত?
বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক প্রবেশ পথেই বিছিয়ে রাখা ভারতের পতাকা এবং সেটাকে মাড়িয়ে সেখানে প্রবেশ করছেন ছাত্ররা। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়। আরও একটি শিশুদের স্কুলেরও একই রকম ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, যার সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। তবে আপাতত সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ ভাইরাল। আর এই ঘটনার পরই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন ভারতীয়রা। যে যাঁর নিজের মতো করে গোটা বিষয়টায় ধিক্কার জানাচ্ছেন। বাদ গেলেন না কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
শ্রীজাত এদিন তাঁর কবিতার মাধ্যমে জল বণ্টন থেকে ওপার বাংলা থেকে এই দেশে এসে চিকিৎসার সুবিধা নেওয়া সব কিছুকেই খোঁচা দেন। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন আগে মাতৃভূমি, দেশ। কেউ হিংসা বা ঘৃণা ছড়ালে 'অন্যভাবে কথা' বলবেন। এও মনে করাতে ছাড়েন না যে বাংলাদেশ একটা সময় ভারতেরই অঙ্গ ছিল। এই পতাকার অধীনেই ছিল।
শ্রীজাত তাঁর কবিতায় লেখেন, ‘শুশ্রূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ! / যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন। / ভাষা তো নিশ্চয় প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি। / আমাকে ‘বাঙালি’ থেকে ‘ভারতীয়’ করে তুললে তুমি। / ভালবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো / তাকে যদি তুলে নাও, অন্য ভাবে কথা হবে দ্রুত। / এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো - / তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়? / নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন। / যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নীচে ছিলে একদিন।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে বাই বাই, তপন সিংহের কালজয়ী ছবি দিয়ে শুরু হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব
কে কী বলছেন?
অনেকেই শ্রীজাতর এই পোস্টে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, 'শ্রীজাতদা, এরা শামসুর রহমান, হেলাল হাফিজ, হুমায়ুন আহমেদের জাতি ভাবতেই অবাক লাগছে! এমনকি আমাদের সাদাত ভাইরাও আছেন৷ মানুষগুলোকে কেমন যেন মেলাতে পারছি না।' আরেকজন লেখেন, 'ওই ছবিটা চোখের সামনে ভাসছে, আর ভাসলেই অসুস্থ বোধ করছি। আর তারপরেই আপনার এই কবিতা, যেন জ্বালা জুড়াল খানিক, এই কারনেই শ্রদ্ধা করি আপনাকে।' তৃতীয় ব্যক্তি লেখেন, 'অনবদ্য, একেবারে চাবুক, চোখের সামনে কেমন পালটে গেল একটা গোটা দেশ, সে দেশে এখনও অনেক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আছে, যদিও তাদের নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন, তারা আর কি প্রতিবাদ করবে? তোমার কবিতাটা অসাধারণ।'