বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > KK Demise: ‘KK-র গান আমার অসহ্য লাগে’, শিল্পীর মৃত্যুর পর লিখলেন শ্রীজাত

KK Demise: ‘KK-র গান আমার অসহ্য লাগে’, শিল্পীর মৃত্যুর পর লিখলেন শ্রীজাত

কেকে-র স্মৃতিচারণায় শ্রীজাত

‘সেই থেকে KK আমার শত্রু, সেই থেকে এই গানগুলো আমার দু’চোখের বিষ’, গত ১৬ বছর ধরে কেন কেকে-র থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছেন শ্রীজাত? 

সঙ্গীত শিল্পী কেকে-র মৃত্যুতে হতবাক সকলে। একটা হাসিখুশি জলজ্যান্ত মানুষ,কেমনভাবে মিনিট কয়েকের বাধ্যধানে শেষ হয়ে যেতে পারে? সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না কারুর! কেকে-অনুরাগীদের চোখে জল। বারবার মনে হচ্ছে, সত্যি তো ‘ছোটি সি হ্যায় জিন্দেগি'। গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন। দু-ঘন্টার পারফর্ম করেন নজরুল মঞ্চে, এরপর গাড়িতে উঠে বলেন, ‘শীত করছে’। গ্র্যান্ড হোটেলে ফিরে জানান, অসুস্থবোধ করবার কথা, এরপর সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কেকে-র মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ছে শোকবার্তা। কেউ ভাগ করে নিচ্ছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, কেউ আবার বিস্ময় প্রকাশ করছেন। এদিন কবি, গীতিকার, পরিচালক শ্রীজাত ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট লেখেন ‘হাম রহে ইয়া না রহে কাল’ খ্যাত গায়কের স্মৃতিতে। তুলে ধরলেন ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা, জানালেন কেন ১৬ বছর ধরে তিনি শোনেননি কেকে-র গান।

তিনি লেখেন, ‘KK-র গান আমার অসহ্য লাগে। গত ১৬ বছর ধরে অসহ্য লাগে। সেই ২০০৬-এর ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি KK-র গান আমি সহ্য করতে পারি না। ক্যাব-এর রেডিও-তে হঠাৎ বেজে উঠলে চালককে তৎক্ষণাৎ বলি চ্যানেল সরিয়ে দিতে, কোনও জমায়েতে হুট করে বেজে উঠলে সন্তর্পণে উঠে বাইরে চলে যাই। এতটাই অসহনীয় আমার কাছে, KK-র গান, গত ১৬ বছর ধরে। টানা ১৬ বছর, আমি KK-র গান শুনিনি। সত্যি বলতে কী, পালিয়েছি তাঁর কাছ থেকে’।

শ্রীজাত জানান, কেকে নয় তিনি আদতে পালিয়ে বেরিয়েছেন তাঁর অকালে চলে যাওয়া ভাইয়ের কাছ থেকে। জনসমক্ষে কোনওদিন নিজের সেই যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেননি। তবে কেকে-র আকস্মিক মৃত্যু আজ তাঁকে বড্ড নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, 'ব্যক্তিগত ক্ষয়ের কথা, আন্তরিক ক্ষরণের কথা সমক্ষে তুলে ধরিনি কখনওই, জীবনের প্রতি সংকোচ আর স্মৃতির প্রতি সম্ভ্রম থেকেই। কিন্তু কিছু আকস্মিকতায় সেসব বাঁধ, সেসব আড়ালও হয়তো টুটে যায় সাময়িক ভাবে। ছোট ভাই, যার আদরের নাম পুশকিন, তার প্রিয় গায়ক ছিলেন KK। আর তার হাত ধরে আমারও। গিটারে তার হাত চলাফেরা করত চমৎকার, আর সুরে গলাও খেলত দিব্যি। তার পড়াশোনা আর পরীক্ষার চাপের ফাঁকে ফাঁকে আমি তাকে জোর করে বসাতাম, ‘গান শোনা দেখি দু’খানা’। এমন বললে সে দু;খানা গানই গেয়ে উঠত কেবল। ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি বড়ি হি হসীন হ্যায়’, আর ‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’।

কবি জানান, এক বাইক দুর্ঘটনায় আচমকাই প্রয়াত হন তাঁর ভাই পুশকিন। সে ছিল কেকে-র অন্ধভক্ত। তারপর থেকেই কেকে-কে ‘শত্রু’ বানিয়েছিলেন তিনি। কেকে-র গান ছিল তাঁর ‘দু’চোখের বিষ'।

এরপর তাঁর সংযোজন,'সেই থেকে আমি KK-র অসামান্য সুরেলা আর টানটান দরাজ কণ্ঠ থেকে পালিয়ে বেড়াই, কোনো অনুষ্ঠানে তিনি মাইক হাতে নিলেই আমি উঠে চলে আসি, কখনও পিকনিকের দুপুরে তাঁর গান বাজানো হলে আমার বাড়ি যাবার তাড়া চলে আসে। কেউ জানে না, কিন্তু ১৬ বছর ধরে এই একজন মানুষের গানের কাছ থেকে পালাই আমি। পিঠ বাঁচিয়ে, মন বাঁচিয়ে, চোখ বাঁচিয়ে'।

তবে ভাই পুশকিনের মতোই আজ আকস্মিকভাবেই অকালে চলে গেলেন কেকে। সব অভিমান যেন ভেসে গেল, শ্রীজাত লেখেন- 'KK আসছেন শুনেই নজরুল মঞ্চের কাছাকাছি দিয়ে যাতায়াতের পথ বাছিনি আজ। কে বলতে পারে, যদি ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি...’-র এক কলিও কানে ঢুকে আসে? পালিয়েছি আজও। কেবল বুঝিনি, তাঁরও পালানোর মতলব আছে, পুশকিনের মতোই। রাগ ছিল লোকটার উপর খুব। কখনও দেখা হলে কেঁদেকেটে ঝগড়া করার ছিল অনেকখানি। জড়িয়ে ধরবারও লোভ ছিল খুব, অভিমানে, অসহায়তায়। সেসব গানের সঙ্গেই ভেসে গেল।

‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’... গানের কথাকে একজীবনে এমন অসহ সত্যি করে দিয়ে চলে যাবার মতো মানুষ কমই আসেন পৃথিবীতে। KK তাঁদেরই একজন। ১৬ বছরের গভীর ক্ষতের উপর মলমের বদলে মশাল চেপে ধরলেন তিনি। এমনই মশাল, যার আগুনে দূরে কোথাও পুশকিনের গিটারটাও পুড়ে যাচ্ছে, একা একা...'।

বন্ধ করুন