আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। আন্দোলন থামছে না বাংলাজুড়ে। অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররা। আরজি করের সেনিমার রুমে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের পর কেটেছে ২৬ দিন। বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন লাখো মানুষ।
সোমবার জুনিয়র চিকিৎসকদের শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ লালবাজার অভিযান দেখে অভিভূত সকলে। ২২ ঘণ্টা পর লোহার ব্যারিকেড ওঠে। সিপির সঙ্গে দেখা করে লালবাজার চত্বর থেকে অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেন তাঁরা, তবে কর্মবিরতি জারি রয়েছে। চলছে ধর্না। এই আন্দোলনে শুরু থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবারও মুম্বই উড়ে যাওয়ার আগে লালবাজারে ছুটে গিয়েছিলেন পরিচালক, এবার তাঁদের কাজে ফেরার পরামর্শ সৃজিতের।
এদিন নিজের চিকিৎসক মায়ের বার্তা ফেসবুকে শেয়ার করে নেন সৃজিত। ডাঃ সুমিতা সরকার লেখেন, ‘জুনিয়র ডাক্তাররা অবশ্যই তাঁদের প্রতিবাদ জারি রাখুক, তবে রিলে বেসিসে (অর্থাৎ ঘুরিয়ে ফিরেয়ে)। গরীব রোগীদের কী দোষ যাদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সমার্থ্য নেই? টেলিমেডিসন সকলকে সাহায্য করতে পারবে না। সিনিয়রা সকলে সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছেন, কিন্তু জুনিয়রদের প্রতিস্থাপন করা তো সম্ভবপর নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি জুনিয়র ডাক্তাররা যে কোনও হাসপাতালের মেরুদন্ড। নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে আরও বেশি সংঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে ওদের, পরিকল্পিত এজেন্ডা নিয়ে এগোতে হবে। আমরা সবাই তোমাদের সঙ্গে আছি, এগিয়ে চলো’।
মায়ের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করে সৃজিত লেখেন, ‘আমার মা আরজি করের প্রাক্তনী। তিনি এ কথা বলছেন। আমারও মনে হয়, দুর্ঘটনার কবলে পড়া রোগী কিংবা শিশুদের মতো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এমনটা করাই যায়’। এই পোস্টের কমেন্ট বক্স বন্ধ রেখেছেন সৃজিত।
পরিচালকের মা ডাঃ সুমিতা সরকার বাংলার চিকিৎসক সমাজের অতি পরিচিত এক নাম। অনেক চিকিৎসককে নিজের হাতে গড়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে কেপিসি-র অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান হন।
আরজি কর কাণ্ড সামনে আসার পর থেকেই প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছেন সৃজিত, তবে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা ভাবিয়ে তুলেছে তাঁকেও। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায়। এক ধাক্কায় ১০ই অগস্টের পর থেকে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে আউটডোর পরিষেবা কমেছে ৫০%, ও রোগীর ভর্তির পরিমাণ কমেছে ২৫%?। অস্ত্রোপচারের হারও কমেছে ৫০%।
রাজ্য সরকারের তরফে বারংবার জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে কাজে ফেরার, তবে সিদ্ধান্তে অটল তাঁরা। এর মাঝেই আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টের দিকে চোখ সবার। বৃহস্পতিবার আরজি কর মামলার শুনানি হবে সর্বোচ্চ আদালতে।