ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরেই টালামাটাল। গত সপ্তাহে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বা চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির জেরে দু-দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। মহারাজের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরব এপার বাংলা। এর মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের প্রবেশ পথে বিছানো রয়েছে ভারতীয় জাতীয় পতাকা। আরও পড়ুন-এই প্রথম! বইমেলার পর ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকেও বাদ বাংলাদেশ
তেরাঙ্গা পা-এ মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। যদিও সেই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। কিন্তু ফেসবুকে ব্যাপাকভাবে ভাইরাল সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন 'বাংলাদেশের জামাই' সৃজিত মুখোপাধ্যায় থেকে অভিনেতা জিতু কমল, প্রযোজক রানা সরকার।
নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে ছবিটি শেয়ার করে সৃজিত লেখেন, 'The Last Straw' অর্থাৎ কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া হল! সৃজিতের এই পোস্ট ঘিরে হইচই। পরিচালকের বন্ধু-তালিকায় বাংলাদেশির সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাংলাদেশি অভিনেত্রী আরমিন মুসা পালটা ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়াকে দুষে লেখেন, তারা বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। চুপ থাকার পাত্র নন, সৃজিত। তিনি পালটা লেখেন, ‘কোন সরকার জনসংখ্যার কোন শ্রেণিকে নিয়ে কী করছে তা নিয়ে আলোচনা না করাই শ্রেয়। যদি আমি সংবাদে প্রকাশিত খবরের কথা বলতে শুরু করি, আপনি ভেবে পাবেন না কোনদিকে তাকাবেন। গোটা বিশ্ব দেখছে।’ বাংলাদেশে ঘটা হিন্দু নির্যাতনের ঘটনার দিকেই স্পষ্ট ইশার সৃজিতের। সেদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা এই ঘটনা কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না, বলে স্পষ্ট করেছেন সৃজিত।
বাঙালি পরিচালক শমীক রায়চৌধুরী সৃজিতকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি নিশ্চিত- এই ছবিটি ফটোশপে তৈরি হয়নি? পরিচালক পালটা জানান, সৃজিত জানান তিনি নিশ্চিত, এই ছবি ফটোশপের কারসাজি নয়। একাধিক সোর্স এবং অ্যাঙ্গেল থেকে তিনি একই ছবি পেয়েছেন। সেই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এই প্রতিবাদী পোস্ট।
ক্ষোভের পাশাপাশি অভিনেতা জিতু কমলের কণ্ঠে ঝড়ে পড়ল হতাশা। তিনি আক্ষেপের সুরে লেখেন, ‘এ কী রূপ তোমার!কার সম্বন্ধে এতকাল শুনে এসেছি।কাকে নিয়ে ভেবেছি,আনন্দ পেয়েছি! ভাবতাম, ‘আমার পাশেই আমার বাড়ি।’যে দেশের সংস্কৃতি,খাদ্য ,বস্ত্র বিপনীর উপমা একসময় সারা বিশ্বব্যাপী বন্দিত হয়েছে/হচ্ছেও বোধ করি। যার জাতীয় সংগীত হাঁ করে শুনি। ক্রিকেট মাঠে নিজের দেশ কোন টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলে, পরবর্তীতে মন থেকে তোমাদের সাপোর্ট করে এসেছি। আর আজ কী রূপ তুমি দেখাচ্ছ!’
বাংলাদেশের প্রতি আজও ভালোবাসা আছে জানিয়ে জিতু লেখেন, ‘এ পতাকা,এ দেশ তোমায় কোনদিন কোনো সাহায্য করেনি?? কোনদিন তোমার বিপদে পাশে দাঁড়াই নি?? তোমার দেশের কোন শিল্পী,কোন সভ্যকে কোনদিন অসম্মান করেছে?? ঈশ্বর বা আল্লাহ যাই মানো না কেন,কসম খেয়ে বলো দেখি। কূটনীতি-রাজনীতি সারা পৃথিবীব্যাপী চলছে আর চলবে। কিন্তু এই নোংরা রাজনীতির ফাঁদে তোমরা সাধারণ মানুষ কী করে পা দিলে?? সাবধান করি,এই ভয়ংকর খেলায় মেতো না । কোন এক অশুভ শক্তি চাইছে,তোমার সংস্কৃতি,তোমার আব্রু,তোমার সৌন্দর্য বিনষ্ট করতে। ধ্বংস করতে চাইছে তোমায় সম্পূর্ণ ভাবে। রুখে দাঁড়াও,জোট বাঁধো বাংলাদেশ। ১৫০কোটি তোমায় হুমকি দিচ্ছে না। সাবধান করছে। এরপর মারপিট হবে না, শুধু মারই হবে একটা সময়। কারণ,এ দেশ আমার দেশ। এ ভারতবর্ষ আমার ভারতবর্ষ। আমি একে যে,তোমার থেকে একটু হলেও বেশি ভালোবাসি।’
রানা সরকার মনে করেন, ‘দুষ্কৃতীদের কপাল ভালো ভারতবাসী সহনশীল। ক্ষমা, ত্যাগ, বিনয় ও ধৈর্য্য বৈদিকযুগ থেকে ভারতীয়রা অভ্যাস করে চলেছে।’ তবে ভারতের ‘সহনশীলতাকে কেউ দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না' হুঁশিয়ারি রানার।