ছবি: সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই
পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্র, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, অর্জুন চক্রবর্তী, ঋত্বিক চক্রবর্তী
রেটিং: ৪.৫/৫
এক রুকা হুয়া ফ্যায়সলা অবলম্বনে বানানো হয়েছে যে সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই ছবিটি সেটা পরিচালক আগেই জানিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে মনে হল এটা ঠিক রিমেক তো নয়ই, বরং নিজের মতো করে তিনি বানিয়েছেন ছবিটি। গল্প মোটের উপর এক হলেও, স্বতন্ত্রতা আছে। এবার জানা যাক কেমন লাগল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই।
কেমন হল সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই?
এই ছবির গল্প বা ইঙ্গিত কোনওটাই বিশেষ দেওয়া যাবে না, তাহলেই স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে। খালি এটুকুই বলি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রটি একজন জাজের। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে কিছু পরিচিত মানুষ তাঁর বাড়িতে আসেন। কিন্তু সেই পার্টি ভাঙতে না ভাঙতে কিছুদিনের মধ্যে তিনি যে কেস নিয়ে রায় শোনাতে চান সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। তারপর কী ঘটে সেটা ছবি দেখলেই জানা যাবে। গল্পে রয়েছে ১২ টি চরিত্র, বলা ভালো জাত, ধর্ম, সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশন, ভাষা, ইত্যাদি মিলিয়ে ১২ রকমের চরিত্র।
আরও পড়ুন: নটীর জীবনের নিপাট কোলাজ 'বিনোদিনী'! সকলকে ছাপিয়ে গেলেন রুক্মিণী
সবার আগে শুরু করা যাক অভিনয় দিয়ে? সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর এই ছবির জন্য যেভাবে কাস্টিং করেছেন, এবং তাঁদের অভিনয় দেখার পর এটুকুই বলতে পারি এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। কিন্ত তারপরেও সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। শরীরী অঙ্গভঙ্গি থেকে এক্সপ্রেশন সবই নজর কেড়েছে। তবে কিছু জায়গায় তাঁর স্বর পুরুষালি ঠেকেছে। সেই দিকে আরও একটু সচেতন বোধহয় হওয়া যেত।
অন্যদিকে শুরুর দিকে তেমন ভাবে খাপ না খুলতে পারলেও ঋত্বিক চক্রবর্তী ছবির শেষ দিকে গিয়ে যে লেভেলে দাপট দেখালেন সেটা অনবদ্য। সমুদ্রের পাড়ে অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং সৌরসেনী মৈত্রের সিন মনে থাকবে বহুদিন। ওই আতঙ্ক, যন্ত্রণা যেন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সুহোত্র তাঁর চরিত্রের বদল যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটাও বাহবা পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনি চট্টোপাধ্যায়, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ নিজ জায়গায় যথাযথ। সকলেই যে দক্ষ অভিনেতা প্রতিটা ফ্রেম, প্রতিটা সিন বুঝিয়ে দিয়েছে। কোথাও গিয়ে অতি রঞ্জিত বা চড়া লাগেনি। সবটা যেন মাপে মাপে।
প্রতিটা চরিত্র কেসটা নিয়ে যে মতামত দিচ্ছে সেটার সঙ্গে সেই চরিত্রের অতীত বা মনে চলা ঝড়কে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু দৃশ্যে চরিত্রদের সঙ্গে আপনারও মনে হতে পারে ধুর এবার একটা সিদ্ধান্তে আসুক, এমন উত্তেজনায় ভরা জায়গা আছে বেশ কিছু।
এই ছবির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যেটা না বললে অন্যায় হবে সেটা এই ছবির গান, তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা। সৃজিত মুখোপাধ্যায় যদি এক রুকা হুয়া ফ্যায়সলা অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করেছেন নাও জানাতেন, তাহলে এই গানটির আক্ষরিক রিপ্রেজেন্টেশন বলেও চালানো যেতে পারত ছবিটিকে। আর একই সঙ্গে এই গানে যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে ঘরের দেওয়াল ভাঙার সঙ্গে মনের দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার রূপক ব্যবহার করে সেটা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধু এটাই নয়, ছবিতে বেশ কিছু মেটাফর আছে যা আলাদা ভাবে নজর কেড়েছে। আসলে বারোজন অভিনেতা থাকলেও এই ছবির আসল হিরো বোধহয় এর মেদহীন ঝরঝরে স্ক্রিপ্ট, স্মার্ট স্টোরি টেলিং।
আরও পড়ুন: 'সিসিটিভির লোকটাকে আমার ছেলের মতো দেখতে নয়', দাবি সইফের হামলাকারীর বাবার
আরও পড়ুন: ‘ছুরিকাঘাত করে ১১ তলার সিঁড়ি-গেট পার হল, কেউ আটকাল না?’, সইফের হামলার গল্প ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’, দাবি তসলিমার
ফলে পূর্ণবয়স্ক হলে এই উইকেন্ডে এই ছবিটি দেখা যায় সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। হতাশ হবেন না। বরং এমন অনেক চিন্তা, কথা, বাস্তবের সঙ্গে মিল নিয়ে ফিরবেন যেটা ভাবাবে।