চিরাচরিত নায়ক সুলভ চেহারা বা গড়ন কিছুই তাঁর ছিল না। কালো, সাদামাটা চেহারার গ্রামের ছেলে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির পুঁজি বলতে শুধু অভিনয় দক্ষতা। তাতে ভর দিয়েই উত্তরপ্রদেশের বুধনার ছেলেটা মায়ানগরীতে পা রেখেছিল।
১৯৯৯ সালে 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা' থেকে পড়াশোনা সেরে মুম্বইয়ে পা রাখেন নওয়াজ। আমির খানের ‘সরফরোজ’ ছবিতে এক্সট্রা হয়েই থেকে গিয়েছিলেন। এরপর জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে বছরের পর বছর স্ট্রাগল করেছেন। মুম্বই এসে চারজনের সঙ্গে শেয়ারে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তখন। আর এখন মুম্বইয়ের মতো শহরে নিজের রাজপ্রাসাদ বানিয়েছেন নওয়াজ। যার অন্দরমহল দেখলে তাক লাগবে।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিলাসবহুল বাড়ির ভিতরে উঁকি দিলেই চারিদিকে আভিজাত্যের ছোঁয়া স্পষ্ট। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই বাড়ির নকশা নওয়াজের নিজের হাতে বানানো। স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি, সেই সুবাদেই কোনও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নয়, বাড়িটির প্ল্যানিং নিজেই করেছেন নওয়াজ।
নওয়াজের বাড়ি ‘নবাব’
নীল এবং সাদা এই দ্বিতল বাড়ির নামফলকে লেখা ‘নবাব’। নওয়াজের নবাবিয়ানার চিহ্ন এটি। কংক্রিটের জঙ্গল মুম্বইয়ে প্রচুর সবুজ গাছপালায় ঘেরা এই বাড়ি। নবাবদের মতোই বিরাট কাঠের দরজা দিয়ে অন্দরে প্রবেশ করতে হয়। সেক্রেড গেমসের পর এই বাড়িটি তৈরি করেছেন নওয়াজ। অভিনেতার কথায়, মুম্বইয়ে বাড়ি কেনার স্বপ্ন কোনওদিনই ছিল না তাঁর।
লিভিং রুমটি সুদর্শন শিল্প, আরামদায়ক আসবাবপত্র এবং প্রচুর বই দিয়ে সজ্জিত। সেখানে রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের চিত্রকর্ম এবং নাটকের পোস্টার। এই বাড়ি যে কোনও শিল্পীর থাকার জায়গা এক ঝটকায় বলে দেবেন যে কেউ। আশ্চর্যজনকভাবে বাড়িতে নিজের কোনও ছবি রাখেননি নওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি কখনই চাইব না আমার মুখ সারা বাড়িতে লাগানো হোক, সেটা আমার পছন্দ নয়’।
লিভিং রুমটি অন্তরঙ্গ হলেও, ডাইনিং অঞ্চলটি বেশ ফর্ম্যাল। সেখানে ধূসর-কাঠের চেয়ার এবং নিখুঁত সাদা পর্দার সুন্দর মেলবন্ধন চোখে পড়বে।
নওয়াজউদ্দিনের ডুপ্লেক্স জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান শিল্পকলা। তাঁর পাওয়া পুরস্কারও সাজানো রয়েছে। বাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি বেশ নজরকাড়া। মার্বেল মেঝে এবং কাচের দরজা সহ তার ছাদবারান্দা মন ভরিয়ে দেবে। অভিনেতার বাড়ি জুড়ে মানিপ্লান্টের সুন্দর ব্যবহার চোখে পড়ে।
নওয়াজউদ্দিন তার পরবর্তী ছবি রাউতু কা রাজের মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে তিনি একজন পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করছেন। এই মুহূর্তে চর্চায় নওয়াজ কন্যা শোরা। ১৪ বছর বয়সী নওয়াজ কন্যর সৌন্দর্যে বুঁদ নেটপাড়া। অভিনয়ের তালিম নিচ্ছে সে, বাবার মতোই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন তাঁর দু-চোখে। মেয়ের সম্পর্কে তিনি জানান, ‘ও অভিনেত্রী হতে চায়। নিজেই সবকিছু করছে। অভিনয় প্রশিক্ষণ স্কুলে অ্যাডমিশন নিয়েছে। ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখে….’। তবে মেয়ে তাঁর কাছে অভিনয়ের টিপস চায় না, স্পষ্ট জানালেন অভিনেতা।