মন খারাপ শুভশ্রীর। মন এতটাই খারাপ চেয়ে কান্না চেপে রাখতে পারছেন না নায়িকা।শীঘ্রই মা হতে চলেছেন এই টলি সুন্দরী। তাই এখন হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করছেন শুভশ্রী,তাঁর হবু সন্তানের জন্য। তবুও পরিস্থিতি ভালো থাকতে দিচ্ছে না শুভশ্রীকে। করোনায় বিধ্বস্ত গোটা পৃথিবী, এর মাঝেই আমফান লন্ডভন্ড করে দিল বাংলাকে। প্রকৃতির রোষ যেন পিছু ছাড়ছে না মানুষের। আমফান কেড়ে নিয়েছে ৭৪টা তরতাজা প্রাণ। বহু মানুষ তাই গৃহহীন। আশ্রয় পেয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।আমফানের ভয়াল তান্ডবের পর তিনদিন কেটে গেলেও এখনও দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মিলছে না পনীয় জল! তাই মন খারাপ শুভশ্রীর। এই পরিস্থিতিতে গর্ভস্থ সন্তানের জন্য কলম ধরলেন শুভশ্রী। সন্তানের জন্য লিখে ফেললেন একটি খোলা চিঠি-'তোর জন্য'।
সন্তানের জন্য লেখা এই খোলা চিঠি নিজেই পাঠ করেছেন শুভশ্রী। শেয়ার করেছেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে। তিনি লিখেছেন-
‘মনটা বড্ড খারাপ। সারাক্ষণ চেষ্টা করছি মনটাকে ঠিক রাখার, কিছুতেই পারছি না। সবাই বলে প্রেগন্যান্ট হলে হাসিখুশি থাকতে হয়, কী করে থাকব বল তো! তোর কথা ভেবেই সব ভোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এত ধ্বংসস্তূপ আগে কখনও দেখিনি যে… কান্না চেপে রাখতে পারছি না। নিজের মনটাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, যে না না এখন মন খারাপ করলে চলে না! ভাবছি তুই কী ভাববি… কিন্তু নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না’।
শুভশ্রীর এই চিঠিতে উঠে এসেছে আমফানে ভেঙে পড়া হাজার হাজার গাছেদের বেদনা। তিনি লিখেছেন,'..জানিস কত হাজার হাজার গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কত পুরোনো আদ্যিকালের বটগাছ, অশ্বত্থগাছ আরও কত কী! সেগুলোকে আর ফেরানো যাবে না। আমি যে গাছকে এত ভালবাসতাম আগে কখনও অনুভব করিনি। গাছেদের জন্য এত মনখারাপ…ভাবিনি। তোকে গল্ফগ্রীন, সাদার্ন এভিনিউ, ময়দানের সবুজ দৃশ্যগুলো আর দেখানো হল না। সেই বড় বড় গাছগুলো…সেগুলো তো শুধু গাছ ছিল না। ছিল হাজার হাজার পাখির বাসা। তুই দেখতে পেলি না'।
গৃহহারা মানুষদের যন্ত্রনাও ধ্বনিত হল নায়িকার লেখনিতে। শুভশ্রী লিখেছেন, '…৮২ হাজার ঘর ভেঙে গেল এই ঝড়ে। কী করছে এখন সেই গৃহহারা মানুষগুলো? তারওপরে করোনার প্রভাব তো বাড়ছেই। এমনিই কম অভাব ছিল না ওদের…এখন মুখে তোলার অন্নটুকুও নেই। আশ্রয় বলতে মাথার ছাদটুকুই ছিল সেটাও উড়ে গেল।
জানিস! শুনলাম সুন্দরবনে চাষের জমিগুলোতে নদীর জল ঢুকে গেছে, ওখানকার নদীর জল নোনা। সারাবছর আর চাষ হবে না। কী করে চলবে ওদের? আজকে সারাদিন একটা ছবি সোশাল মিডিয়াতে ঘোরাফেরা করছে, বছর চারেকের একটা বাচ্চা বুক সমান জল পেরিয়ে খাবার নিতে এসেছে ত্রাণ শিবিরে। এরপরেও তোর কথা ভেবে কী করে বেশি বেশি খাই বলতো? এই তো আর কিছু বছর পরে তুইও ওর সমানই হবি। ও তো তোর মতোই। কী দোষ করেছিল ও?
মাঝে চিৎকার করে প্রকৃতিকে বলতে ইচ্ছে করছে.. আর কত? আবার ভয় লাগছে। পাছে, পালটা প্রশ্ন আসে! পৃথিবীর হৃদপিন্ড যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, কোথায় ছিল তোদের মনুষ্যত্ব? জঙ্গল কেটে যখন ফ্ল্যাটবাড়ি বানাস, তখন তোদের বিবেকে বাঁধে না? জঙ্গলের মধ্যে রেল লাইন পাতিস, আর তাতেই কাটা পড়ে কত হাতির দল। কটা প্রশ্ন করিস তোরা মানুষরা? ছি-ছি সত্যিই কোনও উত্তর দিতেই পারব না। তার জন্যেই চুপ করে আছি।
ভাবছি সবকিছুর বদলা নিতেই কী এসেছে এই বছরটা? তাহলে কি সত্যিই সব শেষ হয়ে যাবে? আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি শুধু ধ্বংস না সৃষ্টিও করবে এই পৃথিবী। তোকে সৃষ্টি করার যে আনন্দ প্রত্যেকদিন আমি উপভোগ করি, পৃথিবীর সবাই সেই আনন্দ উপভোগ করবে খুব তাড়াতাড়ি। শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাতের পর দিনের অপেক্ষা'।
হ্যাঁ, ২০২০-র এই বিষজ্বালা একদিন শেষ হবেই। পৃথিবী আবার হাসবে, বাংলা ঘুরে দাঁড়াবে, সেরে যাবে সব ক্ষত,মুছে যাবে করোনার আতঙ্ক-আশায় বুক বাঁধছেন শুভশ্রী,যেমনভাবে আশাবাদী গোটা বাংলা।