পাড়ায় পাড়ায় আজ আর সেই অর্থে অনুষ্ঠান হতে, কিশোর কণ্ঠী, লতা-আশা কণ্ঠীদের রমরমা দেখা যায় না তেমন। অথচ যাঁরা ৮০-৯০ দশকের ছেলেমেয়ে বা আরও বয়স্ক তাঁদের কাছে কিন্তু অতি পরিচিত বিষয়টা। যদিও গ্রামে, গঞ্জে, বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আজও যাত্রা, বা এসব মাচা অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু অনেকেই সেই অনুষ্ঠানকে খাটো করেন। এবার সেই বিষয়ে যোগ্য জবাব দিলেন সুরজিৎ ও বন্ধুরা তথা ভূমি ব্যান্ড খ্যাত গায়ক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: কলকাতার পাবে আইটেম সংয়ে কাঁটায় কাঁটায় একে অন্যকে টক্কর দিলেন টোটা-শান্তনু! ব্যাপারটা কী?
আরও পড়ুন: 'সিনেমা হেরে গিয়েছে', হঠাৎ এমন কেন বললেন অনির্বাণ?
মাচা শো নিয়ে কী লিখলেন সুরজিৎ?
এদিন সুরজিৎ তাঁর পোস্টে লেখেন, 'যারা মাচা মাচা বলে একটা তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা ভাবে শব্দটা ব্যবহার করে তাদের জন্যে মনে হয় একটু বলি। মাচা মানে মঞ্চ। মঞ্চ আমাদের অডিটরিয়ামও। সেগুলো ইট কাঠ পাথরের পার্মানেন্ট মঞ্চ । সবাই জানি আমরা। তৈরি করা থাকে, গ্রিন রুম, দর্শক আসন ইত্যাদি। মাইক লাগানোর জায়গা, acoustic, এক তলা হোক, বা দোতলা। স্টেজে পর্দা লাগানো , ব্যাক ড্রপ, সুন্দর। একেকটা অডিটরিয়ামে আসন সংখ্যা মাপা থাকে। ৭০০, ৮০০, ১২০০, ২০০০, ৫০০০ । শীতাতোপ নিয়ন্ত্রণ। সব কিছুই, পারফেক্ট। আর এই মঞ্চ বা মাচা যখন কোন মাঠে, গ্রাউন্ডে বা রাস্তায়, বা গলিতে নির্মাণ করা হয়। সেটা কি মনে হয় সামান্য, সহজ কাজ ? বাঁশ,পাটাতন, ট্রাস রড, ইলেকট্রিক কানেকশন , দড়ি লাগে, পেরেক লাগে, সিঁড়ি তৈরি করতে হয়, ড্রাম বসানোর জন্য রাইসার বানানো হয়, এল ইডি স্ক্রীন লাগানো হয়। কখনও থিম থাকে, কখন ও আলো লাগানো হয়, আলাদা ডিসাইন করা হয়। ক্রিয়েটিভিটির কোন শেষ নেই। একেকটা মঞ্চ একেক রকম। আর তার পেছনে থাকা কত অসংখ্য মানুষের শ্রম চোখে পড়ে। একবার ভেবে দেখা দরকার।'
তিনি আরও লেখেন, 'একটা অনুষ্ঠানের কাঠামোটা তৈরী,কী সুবিশাল একটা কর্ম কান্ড। তৈরী করা আর অনুষ্ঠান শেষে আবার তা খুলে ফেলা। ভাবা যায় না। এইগুলো টেম্পোরারি মাচা বা মঞ্চ। আর দর্শক আসন? অসংখ্য। দশ হাজার,কুড়ি হাজার, ৫০ হাজার। বুঝতেই পারি না, সামনে শুধু মানুষের ঢল আর তাদের আনন্দ। সেই আনন্দ গুণ করে আর যোগ করে শেষ করা যায় না। কত মানুষ আসেন সেই মঞ্চের সামনে বসে , শীতে, গরমে, বৃষ্টিতে ছাতা মাথায়,কয়েকদিনের আনন্দ নিয়ে যাবার জন্যে। গ্রাম, গঞ্জ কত শত জায়গায় যে আমরা গেছি তার ইয়াত্তা নেই। আমরা শিল্পী, মঞ্চে গান করি, যাত্রা শিল্পীরা অভিনয় করেন। আপনাদের জন্যেই। তাই মাচা মাচা করে এই বিশাল কর্ম যজ্ঞকে অবজ্ঞা, বা খর্ব করে দেওয়ার পক্ষপাতী আমি একেবারেই নই। যারা এই মঞ্চের কাঠামো তৈরি করছেন, তাদের পেশা হিসেবে, তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে তাদেরকে শ্রদ্ধা করা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। কত কত বছর ধরে আমাদের বিভিন্ন রাজ্যে, অলিতে গলিতে এই মঞ্চে উঠে গান করেছি। আমরা কৃতজ্ঞ। আপ্লুত।'
কে কী বলছেন?
তাঁর পোস্টে অনেকেই নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। শেয়ার করেছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, 'প্রত্যেকটা মঞ্চকে সম্মান করতে শেখা উচিৎ।' আরেকজন লেখেন, 'একদম ঠিক কথা বলেছেন। আপনি গানের জগতের মানুষ আর আমরা মফস্যলের সাধারন থিয়েটারের কর্মী মাচার থিয়েটার করি এরূপ কথা শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু তারা জানেনা যে ব্যায়বহুল ঠান্ডা যায়গায় নিজেদের দক্ষতা দেখায় সেটা তৈরী করতে প্রথমে মাচার দরকার হয়।' তৃতীয় ব্যক্তি লেখেন, 'এখন মাচা মঞ্চ র সংখ্যা কমে গেলেও, যেখানে যেখানে হয়, তার তাপ উত্তাপ অন্য এক মেজাজের।'