চূড়ান্ত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। সেই সময় নাকি প্রয়াত অভিনেতাকে সবথেকে বেশি সমর্থন জুগিয়েছিলেন রিয়া চক্রবর্তী। সাংবাদিক বরখা দত্তের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করলেন সুশান্তের থেরাপিস্ট সুজেন ওয়াকার।
তিনি দাবি করেন, মানসিক অবসাদ এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন সুশান্ত। নিজের ‘দায়িত্ব’ পালনের জন্য সুজেন বলেন, ‘সুশান্ত সিং রাজপুত এবং রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ভুয়ো তথ্য এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে (এই বিষয়ে) মুখ খোলা আমার কর্তব্য। ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) এবং সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে গত নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে আমি সুশান্ত ও রিয়ার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি এবং চলতি বছর জুনেও রিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি।’
সুজেন আরও জানান, মানসিক রোগ নিয়ে চারপাশে যে ভুল ধারণা, নাক সিঁটকানো বিষয় আছে, তা রোগীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সুশান্ত বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। সেই চূড়ান্ত মানসিক অসুস্থতা যে কোনও সময়ে কোনও ব্যক্তি বা মহিলার পক্ষে ভয়ানক হতে পারে। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে চূড়ান্ত উদ্বেগ, গুরুতর অবসাদ, কখনও কখনও উলটোপালটা চিন্তাভাবনা ও প্যারেনয়া (মস্তিষ্কে বিকৃতি)। মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ক্রমাগত যে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে, তার জেরে রোগী এবং রোগীর পরিবাবের কাছে সাহায্য চাওয়ার পথ অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটা বন্ধ করতে হবে। ক্যানসার বা ডায়াবিটিসের তুলনায় একটুও আলাদা নয় মানসিক রোগ। শ্রেণি, আর্থিক অবস্থা এবং অন্যান্য বিভাজন ছাড়িয়ে এটা যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমনভাবে ক্যানসার পারে, সেরকম।’
সুশান্তের মৃত্যুর পর একটি অংশের চক্ষুশূল হয়ে ওঠা রিয়াই নাকি সেই কঠিন সময়ে সুশান্তের সবথেকে বড় ‘ভরসা’ ছিলেন বলে দাবি করেছেন সুজেন। তাঁর বক্তব্য, ‘অবসাদ এবং হাইপোমেনিয়ায় প্রচণ্ড ভুগছিলেন সুশান্ত। রিয়া তাঁর সবথেকে বড় সমর্থন ছিলেন। কাপল হিসেবে যখন ওঁদের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন ওঁর (রিয়ার) চিন্তা, ভালবাসা এবং সমর্থন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ওঁরা যে কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তা স্পষ্ট ছিল। রিয়া ওঁর (সুশান্ত) অ্যাপয়েন্টমেন্টের দেখভাল করতেন। কেউ বিষয়টি জেনে যাওয়া নিয়ে সুশান্ত ভয় পেলেও ওঁকে (থেরাপিস্টের কাছে) যাওয়ার সাহস জুগিয়েছিলেন রিয়া।’
সুজেনের রিয়া স্তুতি অবশ্য সেখানেই শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ‘উনি (সুশান্ত) যখন অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন, তখন কার্যত মায়ের মতো ওঁর (রিয়ার) উপর নির্ভর করেছিলেন (সুশান্ত) এবং ভালোবাসা, উৎসাহ এবং ধৈর্যের সঙ্গে সেই ভূমিকা পুরোপুরি পালন করেছিলেন উনি (রিয়া)। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ মানসিক রোগের ভয়াবহতার শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দেখার সময়টা ওঁর (রিয়ার) কাছে অত্যন্ত কঠিন ছিল। তাঁদের সেটা গোপন রাখতে হত এবং পুরোটাই নিঃসঙ্গে বহন করতে হত, যা একটা বাড়তি মানসিক আঘাত। সোশ্যাল মিডিয়ায় রিয়া যে ব্যবহার পেয়েছেন, তা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনমাদায়ক। কারণ ওঁকে (রিয়া) আমি শুধুমাত্র অত্যন্ত যত্নশীল এবং সংবেদনশীল হিসেবে দেখেছি। সুশান্তের দুঃখজনক ও অকাল মৃত্যু আমাদের সকলের জন্য আরও একটা শিক্ষা হওয়া উচিত যে মানসিক রোগ নিয়ে যে লজ্জা এবং উলটোপালটা ধারণা আছে, তা বন্ধ করা।’