অভিনেতা সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর রহস্যের জট খুলতে করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে সিবিআই ।এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায় সিবিআইয়ের পক্ষে যাওয়ার পরেই আর কোনো রকম সময় নষ্ট করতে চান না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারেরা । মুম্বই পুলিশ শুরু থেকেই দাবি করে এসেছে আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত, সেখানে অন্য কোনও ফাউল প্লে-র সম্ভবনা নেই। যদিও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনওরকম সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না সিবিআই।
সুশান্ত খুন হয়েছেন কিনা , এই সন্দেহ ক্রমশ দানা বেঁধেছে তদন্তকারী অফিসারদের মনে । সিবিআইকে সুশান্তের মৃত্যুজট খুলতে সহায়তা করবে নয়া দিল্লির এইমস এর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা । ইতিমধ্যেই পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে এইমস কর্তৃপক্ষ ।যার নেতৃত্বে রয়েছেন এইমসের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডক্টর সুধীর গুপ্ত।
'আমরা সুশান্তকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তার সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবো ‘ , সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এমনটাই জানিয়েছেন ডক্টর সুধীর গুপ্ত । আপাতত তাঁর নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে এই পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড । তাঁদের তৈরী করে দেওয়া মেডিকো -লিগাল (medico-legal) ওপিনিয়ন রিপোর্ট তদন্তে গতি আনবে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা ।
সুধীর বাবু জানান তিনি ও তার টিম সুশান্তের শরীরে খুঁজে পাওয়া যাবতীয় ক্ষত চিহ্ন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করবেন । এছাড়া প্রয়াতও অভিনেতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি, সেই সময় সংগ্রহ করা আনুসাঙ্গিক যাবতীয় প্রমান বা কারকমস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স ও খতিয়ে দেখা হবে। সুশান্তকে যে সমস্ত অ্যান্টি-ডিপ্রেশনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল সেগুলির কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করা হবে এইমসের ল্যাবরেটারিতে।
সুশান্তের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডক্টর সুধীর গুপ্ত। ইন্ডিয়া টুডেকে তিনি জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সময় উল্লেখ থাকাটা বাধ্যতামূলক। অর্থাত্ কোন সময় মৃত্যু হয়েছে প্রয়াতের তা বেঁধে দেওয়া হয় রিপোর্টে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই কলামটি আশ্চর্যজনকভাবে ফাঁকা। যা দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে । এই বিষয়ে ডাক্তার গুপ্ত জানিয়েছেন , ‘আমি এখনই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারিনা । সমস্ত বিষয়টাই খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হবে । তবে অটোপসি রিপোর্টে টাইম স্ট্যাম্প থাকা একান্তই বাধ্যতামূলক । যদি তা না থাকে বা কোনও ভুল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আইন অনুসারে পুলিশকে অবশ্যই অন্য কোনো ডাক্তারের থেকে সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে হয় । কিন্তু এই নিয়মও এখানে মানা হয়নি। তবে যে চিকিত্সকরা ময়নাতদন্ত করেছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব’।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল এইমস গিয়ে জানান তাঁরা যত শীঘ্র সম্ভব ভিসেরা রিপোর্ট , অটোপ্সি রিপোর্ট , সুশান্তের যাবতীয় মেডিকেল রিপোর্ট এবং পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন ।
মেডিকো-লিগাল ওপিনিয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তার গুপ্ত এবং তাঁর দল ভারতের অন্যতম অভিজ্ঞ ও সেরা বলেই বিবেচিত । বহু হাই প্রোফাইল কেস আগেও সামলেছেন তাঁরা । এগুলির মধ্যে শিনা বরা হত্যা কান্ড , সুনন্দা পুস্কর মৃত্যু রহস্যের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেসের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই দলের। তাঁদের মূল্যবান মতামতের উপর অনেক খানি নির্ভর করবে এই কেসের দিশা।