জীবন কতখানি বিচিত্র ও একইসঙ্গে নিষ্ঠুর হতে পারে তা বোধহয় সুশান্ত সিং রাজপুতকে না জানলে বোঝার উপায় নেই। পাটনার রাজীব নগরের গলি থেকে বলিউডের রুপোলি পর্দার উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠবার সুশান্ত সিং রাজপুতের সফরটা চড়াই-উতরাইতে ভরা। তবে সুশান্তের আচমকা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর এই সফরনামাটা সম্পর্কে অনেকেই অবগত ছিলেন না। ছোট থেকেই পড়াশোনাতে তুখোড় ছিলেন সুশান্ত। বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর চরম আগ্রহ। AIEEE-র পরীক্ষায় সপ্তম ব়্যাঙ্ক করেছিলেন সুশান্ত। ভর্তি হয়েছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-দিল্লি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। শুধু তাই নয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থবর্ষে স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপের সুযোগও পেয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। কিন্তু নিজের ডিগ্রী আর স্বপ্নের স্কলারশিপকে হেলায় ছেড়ে দিয়েছিলেন বলিউডের ব্যাক গ্রাউন্ড ডান্সার হতে! অবিশ্বাস্য হলেও একটাই সত্যি। সেই গল্প নিজেই হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছিলেন সুশান্ত।সেই অর্থে এটাই অভিনেতার শেষ সাক্ষাত্কার!
ছোট থেকেই শাহরুখ খানের ভক্ত ছিলেন সুশান্ত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়বার সময়ই দিলবালে দুলহানিয়া লেযাঙ্গে দেখে শাহরুখের প্রেমে পড়া, আয়নার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে সুরজ হুয়া মধ্যম গানে ঠোঁট নাড়ানো… যে সব আজ এক ইতিহাস। তিনি বলেছিলেন, সেই সময় যদি আমাকে কেউ কোনও চরিত্র ছবিতে অফারও করত, আমি ফিরয়ে দিতাম কারণ পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট মানুষ ছিল ছেলেবেলায়। শুধু আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই আমার অভিনয় বার হত, কোনও দর্শকের সামনে করা সেটা অসম্ভব ছিল।আমি স্কুলের হেড বয় হতে চাইতাম কিন্তু আমাকে কোনও বিষয়ে বক্তব্য রাখতে হতে আমি স্কুলেই যেতাম না সেদিন'।
বলিউড কেরিয়ার শুরুর আগের সময়টাকে যদিও স্ট্রাগল বলতে রাজি ছিলেন না সুশান্ত। অনেকেই হয়ত বলবেন, আমার বলিউডে আসবার আগের সময়টা ছিল স্ট্রাগল পিরিয়ড। কিন্তু আমি সেটা বলব না। আমি কিন্তু স্ট্রাগল করিনি। আমি সেটাই করছিলাম যা আমি ভালোবাসতাম। আমার মনে হয়েছিল ইঞ্জিয়ারিং কলেজে মেয়ে নেই,তাই শামক দাভরের নাচের দলে যোগ দিয়েছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকে আমার জীবনের চাকাটাই ঘুরে গেল। স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার কথা ছিল, স্কলারশিপ পেয়েছিলাম আর কলেজ ছেড়ে চলে গেলাম ভারসোভাতে, এক কামরা একটা ফ্ল্যাটে যেখানে ছয়জন মিলে থাকতাম। বুঝতেই পারছেন বাড়িতে কী প্রতিক্রিয়া ছিল'।
দুটো সেমিস্টার বাকি থাকতেই কলেজ ছেড়ে দেন পড়াশোনায় তুখোড়,বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সেরা ছাত্র সুশান্ত সিং রাজপুত। দিল্লি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসেই হিন্দুস্তান টাইমস ব্রাঞ্চকে গত বছর অক্টোবরে সুশান্ত ১৩ বছর আগের সেই ঘটনা বলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘সালটা ২০০৬, আমি যখন কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।তখনই বাড়িতে বম্ব ফেললাম। কলেজ ছাড়লাম। সবাই চমকে গিয়েছিল! এতটাই চমকে গিয়েছিল যে একটা কথাও বলেনি। বাবা-দিদিদের সেই নীরবতাটাকেই আমি অনুমতি হিসাবে ধরে নিয়েছিলাম, ব্যাস পৌঁছে গেলাম মায়ানগরীতে। তবে এখন চিত্রটা একদম বদলে গেছে। বাবা আমাকে নিয়ে গর্বিত। সবাই যখন ফোন করে বা দেখা হলে আমার প্রশংসা করে কিন্তু আমার কোনও নতুন ভিডিয়ো ক্লিপিংস দেখায় উনি খুব গর্ব অনুভব করেন। তবে আজও বাবা বলেন, 'বেটা ডিগ্রী লেলেতা’।
২০১৯-এর ১২ অক্টোবর টুইটারের দেওয়ালে দিল্লি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি পৌঁছানোর ঝলক শেয়ার করে সুশান্ত লিখেছিলেন, ‘আমি আর তুমি আসলে একই, শুধু খ্যাতির চমকটা আলাদা, আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা স্বপ্ন পূরণের দিন। স্বপ্ন পূরণের তালিকায় একটা বড় চেক মার্ক। একদিনের সফর আমার আলমা ম্যাটারে (বিশ্ববিদ্যালয়ে) #LivingMyDreams #lovingmydreams’।