স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় মানে বরাবরই আনকাট। রেখেঢেকে কথা বলতে ভালোবাসেন না অভিনেত্রী। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রথম দিন থেকে সোচ্চার স্বস্তিকা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চ, সর্বত্রই নিজের প্রতিবাদী সত্ত্বার পরিচয় দিয়ে থাকেন অভিনেত্রী।
প্রেসিডেন্সি কলেজের ডাকা রাজ্য ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভায় হাজির হয়েছিলেন স্বস্তিকা। সেখানেই ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে কুনাল ঘোষের ‘টেক্কা’ কটাক্ষ সব নিয়েই খোলামেলা বক্তব্য রাখলেন অভিনেত্রী। সোশ্যল মিডিয়া ট্রোল নিয়েও কড়া জবাব তাঁর। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমাকে তো সবসময়ই আক্রমণ করা হয়। স্লিভলেস ব্লাউজ পরলেও অ্যাটাক করা হয়, শরীর ঘামে ভিজে গেলেও অ্যাটাক কর হয়, মোটা হলেও বক্তব্য, রোগা কেন হয়ে গেলেন?…. সেদিন দেখলাম একজন লিখেছেন- উনি (স্বস্তিকা) মরে যাচ্ছি না। আমি ভাবলাম এবার মরে যাওয়া নিয়েও লোকের বক্তব্য থাকবে…যাদের অ্যাটাক করার অভ্যাস সবসময়ই করে যাবে। সেই নিয়ে মাথা ঘামাই না’।
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘সেলিব্রিটি’ তকমাটা তাঁর কাছে ‘গালি’র সমান। নিজেকে শিল্পী বা আর্টিস্ট হিসাবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন স্বস্তিকা। আরজি কর নিয়ে সব পেশার মানুষরা পথে নেমেছেন, তিনিও আর পাঁচজনের মতোই পথে নেমেছেন। এখানে তাঁর পেশাটা জরুরি নয়। সাধারণ মানুষের মতোই তিনি এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
শাসকদলের নেতাদের টার্গেটে স্বস্তিকা-সুদীপ্তারা। কুণাল ঘোষ মঙ্গলবারও অভিযোগ এনেছেন আরজি কর আবেগকে কাজে লাগিয়ে 'টেক্কা'-র প্রচার সারছেন স্বস্তিকা-সৃজিতরা। নেপথ্য টেক্কার সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত একটি পোস্টার। যেখানে দেখা মিলেছ স্বস্তিকার। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখা হলে অভিনেত্রী সরাসরি বলেন, ‘আমি নামই জানতে চাই না, কে বা কারা কী বলছে। আমি তাদের সেইটুকু গুরুত্ব দিতে চাই না। পোস্টার কী হবে, কেমন হবে সেটার দায় বা দায়িত্ব অভিনেতাদের নয়। কোনওদিন ছিল না। বলিউডে কী হয় আমি জানি না। সৌগতবাবু (সৌগত রায়) বোধহয় বলেছেন- আমরা সলমন খান-শাহরুখ খান নই। সেই কথার সূত্র ধরেই বলছি, আমার যেহেতু সলমন-শাহরুখ নই, আমাদের এলেমই নেই যে একটা ছবির পোস্টার কেমন হবে সেটা ঠিক করার। আমার মুখ সেখানে থাকবে কিনা, মুখ কতটা বড় থাকবে, সামনে থাকবে নাকি সাইডে থাকবে….কবে রিলিজ হবে সেটা অভিনেতাদের উপর নির্ভর করে না।’
স্বস্তিকা আরও বলেন, 'যিনি (কুণাল ঘোষ) এই কটাক্ষটা আমাকে করেছেন, তার উচিত আমার ছবির যে প্রযোজক দেব কিংবা আমার পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় তার সঙ্গে কথা বলা। কারণ এখানে ওঁনারা ডিসিশন মেকার। টেক্কা প্রসঙ্গে বলব, আমার যে ছবিটা দিয়ে টেক্কার পোস্টার হচ্ছে সেই ছবি আমার একেবারে পছন্দ নয়। আমি সৃজিতকে চার বার সে কথা বলেছি, কিন্তু পাত্তা দেয়নি। তাহলেই বুঝতে পারছেন…'।
জুনিয়র ডাক্তার অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানান, ‘আমরা আশাবাদী। জিনিসটা সেটল হয়ে গেলে, নাবালক বা নাবালিকাদের রাত জেগে জেগে কষ্ট করতে হবে না। আর আমাদের মত বেকার সেলিব্রিটিদের মুখও সেই সব পলিটিক্যাল পার্টির লিডারদের কম দেখতে হবে।’
মঙ্গলবারই অভিনেত্রী মৌসুমী ভট্টাচার্যকে বডি শেমিং করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা দেবাংশুর বিরুদ্ধে। যার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন স্বস্তিকা। আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়, অভিনেত্রী বলেন, ‘মহিলারা শুধুই শরীর সর্বস্ব একটা মাংসপিণ্ড। আমাদের যদি কটাক্ষ করতে হয়, তাহলে আমাকে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কটাক্ষ করুক, আমাদের পড়াশোনা নিয়ে কটাক্ষ করুক, আমাদের ব্যবহার নিয়ে কথা বলুক…সে সব বাদ দিয়ে একটা মহিলার শরীর নিয়েই মাথাব্যাথা।’ ওই তো বদন… পাশ থেকে যোগ করেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এই কথাগুলো যারা বলছে তাদের চেহারা কি জন আব্রাহামের মতো? যারা সারাক্ষণ মহিলাদের বুক, পেট, পাছা নিয়ে মন্তব্য করে যায় তাদের সবার চেহারা কি হৃতিক রোশনের মতো? প্রশ্ন রাখলেন স্বস্তিকা।